1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আমার ‘ধ্রুব এষ’ আবিষ্কার

  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

দেওয়ান তাছাদ্দুক রাজা ইমন
তখন আমি প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি; ১৯৯২-৯৩ খ্রিস্টাব্দের কথা। সেই থেকেই রূপকথার গল্প, ভূতের গল্প এগুলো পড়তাম। প্রতি রাতেই পড়তাম। বিশেষ করে শীতের রাতগুলোতে কম্বলের ভেতর ঢুকে বই পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগত। গল্পের বই পড়া ছিলো আমার কাছে নেশার মত। পাঠ্যবইয়ে এতো আগ্রহ খুঁজে পেতাম না যতটা পেতাম ভূতের গল্প বইয়ে।
প্রায়ই শহরের লাইব্রেরিগুলোতে ভূত ও রূপকথার গল্পের বই খুঁজে বেড়াতাম। বই খুলে প্রথমেই চোখে পড়ত “প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ” লেখাটির দিকে। এই লেখাটি বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের বইগুলোতে খুব বেশি দেখতাম। তখন থেকেই ধ্রুব এষ-এর সাথে আমার পরিচয়। নামটা আমার কাছে একটু অন্যরকমভাবে ফুটে উঠেছিলো এবং সেই সময় থেকেই তার প্রতি আমার একটা দুর্বলতা কাজ করা শুরু করলো। আমি তাকে ভীষণ পছন্দ করতে শুরু করলাম। কারণ আমিও তখন টুকটাক ছবি আঁকতাম এবং মনে মনে একজন বড় শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম।
হুমায়ূন আহমেদের বইগুলোতে যখন “প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ” লেখা থাকত আমার কাছে মনে হতো এই বইটা খুবই উন্নতমানের হবে। সেই সাথে অন্য লেখকদের সবগুলো বইয়ে আমি প্রথমেই দেখতাম প্রচ্ছদ কার লেখা। যদি দেখতাম প্রচ্ছদ অন্য কেউ করেছেন, আমি সে বইটা কিনতাম না। আমি মনে করতাম এ বইটা ভালো মানের হবে না। অবশ্য ধারণাটা ভুলও ছিল না। কারণ তখন দেখতাম ভালো ভালো সব বইয়ের প্রচ্ছদ ধ্রুব এষ-ই করে দিচ্ছেন এবং হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সবগুলো বইয়ের প্রচ্ছদ ধ্রুব এষের করা। সুতরাং সংগত কারণেই আমি সবার বইয়ের প্রচ্ছদে ধ্রুব এষের নাম খুঁজতাম। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তার বাড়ি যে সুনামগঞ্জে সেটা তখনও জানতাম না। এটা আমার ভাবনারও অতীত ছিলো। যেদিন প্রথম জানলাম যে তিনি সুনামগঞ্জের মানুষ, তখন আমি একটা ঝাঁকুনি খেয়েছিলাম; বিস্ময়ের ঝাঁকুনি!!! সেদিন এতটা বিস্মিত হয়েছিলাম!!! যে কিছুক্ষণের জন্য আমি অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম। আরও বিস্মিত হয়েছি যখন জানলাম একদম শহরেই তার বাসা- উকিলপাড়ায়। তখনতো আমার একেবারে মহাবিস্ময়াবিষ্ট হয়ে রীতিমতো মূর্ছা যাওয়া অবস্থা হয়েছিল…। এতোবড় মাপের একজন প্রচ্ছদ শিল্পীর বাড়ি একেবারে নিজের শহরে! সে বিস্ময় ভাবটি পরবর্তী অনেক বছরকাল ছিলো আমার মাঝে।
ধ্রুব দা’র সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনও পরিচয় নেই, তবে তার কর্মে আমি তার সাথে পরিচিত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কেমন আমি তা জানিনা। তবে আমি তাকে এভাবেই আবিষ্কার করেছি এবং মূল্যায়ন করি… তিনি এক মহান ব্যক্তিত্ব, দেবতুল্য মানব, একজন সাধক পুরুষ, সাধারণ মানুষ কিন্তু অসাধারণ কর্মমুখি, সাধারণ মানুষের থেকে অনেকটা ভিন্ন। রহস্যময়, নির্মোহ, বৈষয়িক জীবনে উদাসীন, নিরহংকারী কিন্তু চরম আত্মসম্মানী, সাদামাটা বাউলমনের অধিকারী, মুক্তমনা শৈল্পিক, স্বার্থের অনেক ঊর্ধ্বে নিজের কর্মে ডুবে থাকা ডুবুরি, কি পেলাম কি পেলাম না সেটা ভাবারও সময় নেই তার, তিনি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মজ্ঞানী। তিনি কাজ করছেন ভালোবাসা থেকে কিন্তু কাজের কোনো বাণিজ্যিক বিনিময় খুঁজেন না, তবে তিনি চান তার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন। তাকে দেখতে অগোছালো এলোমেলো মনে হলেও অন্তর্গতভাবে তিনি পরিপূর্ণ নান্দনিক শৈল্পিক এবং গোছালো একজন মানুষ। স্বার্থবাদীদের হিসাবের সাথে তার হিসেব মিলবে না এবং তাদের হিসাবে কখনও কখনও পাগল বলেও মনে হতে পারে তাকে। তিনি প্রচারবিমুখ একজন নিভৃতচারী শিল্পী, যিনি গুণগত কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রচার ও প্রকাশ করেন কিন্তু অকাজে নিজেকে আড়াল করে রাখাতেই সাচ্ছন্দ্য উপভোগ করেন, আর এই গুণটার জন্যই আমি তাকে মারাত্মকভাবে পছন্দ করি, ভালোবাসি।
দিনশেষে ধ্রুব এষ একজন আলোকোজ্জ্বল মানুষ। আমি তার একজন ভক্ত শুভাকাক্সিক্ষ এবং তার সুস্থ ও দীর্ঘজীবনের জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি।
তাকে পছন্দ করার আরেকটি কারণ হচ্ছে তিনি শিশুদের ভালোবাসেন। তিনি নিজেও একজন শিশুসুলভ মানুষ। শিশুদের নিয়ে তিনি লিখতে ভালোবাসেন। শিশুদের জন্য বেশকিছু বই লিখেছে তিনি। শিশুসাহিত্যে তার পুরস্কার প্রাপ্তিই তা প্রমাণ করে। শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ পাওয়ায় আমি তাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই…।
[দেওয়ান তাছাদ্দুক রাজা ইমন : সাধারণ স¤পাদক, হাছনরাজা পরিষদ এবং সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক আমাদের নতুন সময়]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com