শামসুল কাদির মিছবাহ ::
সুনামগঞ্জে ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট ছাড়াই চলছে অনেক ফার্মেসি। আবার অধিকাংশ ফার্মেসির লাইসেন্স থাকলেও নবায়ন করা হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাই করছেন না ওইসব ওষুধ ব্যবসায়ীরা। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অধিকাংশ ফার্মেসিতে অসদুপায় অবলম্বন করে চলছে ব্যবসায়। তবে ঔষধ ব্যবসায় ভয়াবহতার এই চিত্র জেলা শহরের চেয়ে গ্রাম্য বাজারগুলোতেই বেশি বলে জানিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলায় এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি, হারবাল ও আয়ুর্বেদিকসহ ২১শ ৩৮টি এবং জেলা সদরে ৪শ ১০/১৫ টি ফার্মেসি রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রয় হয় এন্টিবায়োটিক। সামান্য সর্দি-কাশি হলেই হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে এক গাদা ওষুধ। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বেতগঞ্জ বাজার, রঙ্গারচর ইউপির নৈনগাঁও, বনগাঁওসহ ১২ উপজেলার হাট-বাজারে গড়ে উঠেছে শত শত ফার্মেসি। এর মধ্যে অনেক ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স নেই। লাইসেন্সবিহীন ও ফার্মাসিস্ট ছাড়াই এসব ফার্মেসিতে অনভিজ্ঞ বিক্রয়কর্মীরা ওষুধ বিক্রি করছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নৈনগাঁও বাজারের প্রায় ৭টি ফার্মেসির মধ্যে একটিরও লাইসেন্স নেই। পার্শ্ববর্তী বনগাঁও বাজারেরও একই অবস্থা। সূত্র আরও জানায়, প্রায়ই মোবাইলকোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হলেও নদী পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়ে ফার্মেসি বন্ধ করে পালিয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজারসহ ১২ উপজেলার হাট-বাজারের প্রায় ফার্মেসিতে লাইসেন্সবিহীন ও ফার্মাসিস্ট ছাড়াই ওষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। অনেক ফার্মেসিতে রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে এন্টিবায়োটিক। যার ফলে আরোগ্যের চেয়ে রোগীর জীবন আরো সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিউম্যান রাইটস-এর জেলা সভাপতি ডা. এম. আর.শামীম তালুকদার বলেন, গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রায় ফার্মেসিতে লাইসেন্স নেই। একজনের ফার্মাসিস্টের লাইসেন্স অন্যজন ব্যবহার করে ঔষধ ব্যবসা করার অভিযোগও অনেক। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় ওষুধের গুণগত মান নিয়ে সংশয়সহ এন্টিবায়োটিক বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে এসব বেআইনি ও অনৈতিক ব্যবসায় রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর নজরদারি বাড়ানো দরকার।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বলেন, লাইসেন্স না করে কেউ ফার্মেসি ব্যবসায় শুরু করার কথা না। তারপরও যদি কেউ লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায় করে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ওষুধের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষটি খতিয়ে দেখবো। যেহেতু ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য আমাদের কাছে কোনো যন্ত্রপাতি নাই। কেউ যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে এবং ওষুধের গুণগত মান নিয়ে সন্দেহ হয়, তাহলে আমরা ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে যাচাই করার জন্য ঢাকায় ল্যাবে পাঠাবো। তিনি বলেন, ঔষধ ব্যবসায় যারা অসদুপায় অবলম্বন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।