শহীদনূর আহমেদ ::
দিরাইয়ে ঢিলেঢালাভাবে চলছে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস পার হলেও এখনো অনেক বাঁধে কাজ শুরুই হয়নি। অরক্ষিত রয়েছে উপজেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার শয়তানখালি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হওয়া এবং সময়মতো বরাদ্দ না পাওয়ার পাশাপাশি কাজে গতিহীনতার কারণে নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হবে না বলে মনে করছেন কৃষকরা।
জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী দিরাই উপজেলায় হাওরের বোরো ফসলের সুরক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলায় ৯ ইউনিয়নের ১৭৯টি পিআইসির অনুমোদন দিয়েছে জেলা কমিটি। এরমধ্যে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার রয়েছে। ৯৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। চলতি বছরে দ্বিগুণ বরাদ্দ ও প্রকল্প গ্রহণের দিক দিয়ে গেল সকল বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২৮টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলো দুয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে।
বুধবার সরেজমিনে দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নে ১৩৫, ১৩৬, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০, ১৪১, ১৪২, ১৪৪, ১৪৬ প্রকল্প পরিদর্শন করে দেখা যায়, কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি।
১৩৫নং প্রকল্পের মদনখালি নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজার থাকলেও এটিতে এখনো মাটি পড়েনি। মাটি কাটার মেশিন পেতে বিলম্ব হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। তবে দ্রুতই কাজ শুরু হবে বলে জানান এই পিআইসির সভাপতি কামরুল হোসেন।
১৩৬নং প্রকল্পে মাটি ফেলার কাজ শুরু হলেও ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০নং প্রকল্পের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার শয়তানখালিতে কোনো মাটি পড়েনি এখনো।
১৩৮নং পিআইসির সদস্য সচিব কাসেম মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওয়ার্ক অর্ডার পেতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। তাছাড়া এখনো প্রাথমিক বিল না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, উপজেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারের কাজ শুরু না হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছেন বরাম হাওরের কৃষকরা। একাধিক কৃষক জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় দুই ক্লোজার হচ্ছে শয়তানখালি ও তোফানখালি। নদীতে পানি আসলে এই দুই ক্লোজারে বেশি পানির চাপ পড়ে। এতে প্রথম ধাক্কায় বাঁধে ফাটল ধরে। গেল বছরের সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে ছিল শয়তানখালি ক্লোজারটি। ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের দেড়মাসেও ক্লোজারের কাজ শুরু না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন তারা। তাই দ্রুত সময়ে বাঁধের কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কৃষকরা।
তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমেদ বলেন, অনেক পিআইসি এখনো প্রাথমিক বিল পায়নি। কাজ কিভাবে শুরু করবে। তারপরও অনেকেই কাজ শুরু করেছেন। আশা করি, কাজের গতি বাড়িয়ে পিআইসিরা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন।
পানি উন্নয়নে বোর্ডের দিরাই শাখার সহকারী প্রকৌশলী মোনায়েম হোসেন বলেন, এটা ঠিক বেশি প্রকল্প থাকায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। বরাদ্দের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া পিআইসি গঠনের বিলম্বসহ নানা কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। যেগুলো বাকি রয়েছে এক-দুই দিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল ক্লোজারের কাজ শেষ হবে। আশা করছি ২৮ ফেব্রুয়ারির আগে আমাদের সকল বাঁধের কাজ দৃশ্যমান হবে।