শামস শামীম ::
বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ২০টি অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনা করেছিল ভারত সরকার। করোনাকালে বাংলাদেশ যখন এই অতিমারির বিরুদ্ধে লড়ছিল তখন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। এ সময় বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে সারাবিশ্বে লকডাউন শুরু হয়। মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে প্রতিটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশ হাবুডুবু খাচ্ছিল অদেখা অতিমারির সঙ্গে। দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো চরম বিপর্যয়ে পড়ে। এসময় প্রতিবেশী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মানবিক আহ্বানে ভারত ২০২১ সালের ২৪ জুলাই টাটানগর থেকে প্রথম অক্সিজেন এক্সপ্রেস বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল। কোভিডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে লড়তে এই সময় জরুরি ভিত্তিতে ২০টি অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনা করে তারা। ফলে এই অক্সিজেনে করোনারোগীদের প্রাথমিক সেবা সামাল দেওয়ার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে অতীতের মতো বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে ভারত। অন্যান্য প্রতবেশীদের মধ্যে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ প্রত্যয়ে সবসময় বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয় ভারত সরকার। এভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বহুমুখী এবং একে অপরের জাতীয় উন্নয়নের সম্পূরক ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন তারা। এ কারণেই অতীতের ধারাবাহিকতায় কোভিডকালীন বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল বন্ধুদেশ ভারত। আগামীতে সংকটকালে ভারত পাশে থাকবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকাস্থ দূতাবাসের দায়িত্বশীলরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোভিড দুর্যোগে ভারতীয় রেলওয়ে অক্সিজেন এক্সপ্রেস তরল মেডিকেল অক্সিজেন (এলএমও) রেলওয়ে কন্টেইনারে করে বাংলাদেশে পরিবহন শুরু করে। বিভিন্ন সময়ে ২০টি অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেন পাঠায় ভারত সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি সিরাম ইনস্টিটিউট প্রস্তুতকৃত ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাক্সিন বাংলাদেশকে বিনামূল্যে উপহার দেয় ভারত। এর পরেই ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে পৌঁছে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির প্রথম চালানের ৫০ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পৌঁছায় সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ২৬ মার্চ ঢাকায় পৌঁছায় ভারতীয় উপহারের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১২ লাখ ভ্যাকসিন। ৮ এপ্রিল ভারতের সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে ১ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন হস্তান্তর করেন। এভাবে বৈশ্বিক মহামারির শুরু থেকেই ভারত সরকার বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, ভারত সরকার বাংলাদেশের দুর্দিনে ঐতিহাসিকভাবে পাশে রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার এ দেশের জনগণকে খাদ্য, অর্থ, অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিলাম। আগামীতেও আমাদের সহায়তার এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কয়লা আমদানীকারক জিয়াউল হক বলেন, করোনার প্রথম দিকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম আমরা। তখন ভারত সরকার অতীতের মতো আমাদের পাশে এই মহামারিকালে দাঁড়ায়। বিনামূল্যে ভ্যক্সিজেনসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করে অক্সিজেন সরবরাহ করেছে। প্রতিবেশী হিসেবে তারা অতীতেও আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। আগামীতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা মনে করি।
সুনামগঞ্জ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাককানগলা বিভাগের হেড নেক সার্জারি ও আবাসিক চিকিৎসক ডা. এম নূরুল ইসলাম বলেন, কোভিড সংকটে ভারত আমাদেরকে প্রচুর সহযোগিতা করেছে। মহামারির শুরু থেকেই তারা আমাদেরকে অক্সিজেন, ভ্যাক্সিন দিয়েছে। এভাবে প্রতিবেশী হিসেবে তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের সহযোগিতা করছে। আমাদের দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন। এই ধারাবাহিকতা আগামীতেও বজায় রাখতে দুদেশের দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানাই।