স্টাফ রিপোর্টারঃ
তাহিরপুর উপজেলা চলছে হাওর রক্ষাবাঁধের প্রকল্প বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা। বন্যার অজুহাতে গেল অর্থ বছরের চেয়ে এই উপজেলায় বাঁধ নির্মাণে দ্বিগুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার সাড়ে ৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে স্থানে কখনোই বাঁধের প্রয়োজন হয়নি সেখানেও গণহারে বাঁধ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া যে বাঁধে মাত্র একটি প্রকল্প থাকার কথা সেখানে অধিক প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারি টাকা অপচয়সহ কিছু কিছু এলাকায় বাঁধের চিরচায়িত এলাইনমেন্ট পরিবর্তন করে গ্রামের ভেতরে দিয়ে রাস্তা তৈরি, বালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধ নির্মাণকাজের নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে উপজেলার বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়ণের কেন্দুয়া নদী তীরে পাঁচনাইল্লা বাঁধে ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি ফেলছেন সংশ্লিষ্টরা। এই বাঁধে গেলবার কোনো বরাদ্দ ছিল না। তবে সাম্প্রতিক বন্যায় বেশ ক্ষতি হওয়ায় এখানে এই এক বাঁধে তিনটি প্রকল্প দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৬০, ৬১ ও ৬২ নং পিআইসিতে মোট ২৯০ মিটার দৈঘ্যের বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৫৮ লাখ টাকা। একটি বাঁধে বিপুল অর্থের এই বরাদ্দকে অতিরিক্ত বলছেন স্থানীয় কৃষক ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচনাইল্লা বাঁধের এই তিন প্রকল্পে পিআইসির সাথে যারা রয়েছেন তারা সরকার দলের এবং স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির কাছের লোক। ফলে কৌশলে এক বাঁধের এতো বরাদ্দ বাগিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে এমন শ্রুতি রয়েছে জনমুখে। যদিও স্থানীয় ৬১ নং পিআইসির সদস্য সচিব সামাইন কবির দাবি করেন উপজেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার এই পাঁচনাইল্লা বাঁধ। এবার এই বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে তিনটি প্রকল্পে প্রায় ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এই টাকা পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে, বালিজুরি ইউনিয়নে শনির হাওর উপ-প্রকল্পের ৩নং প্রকল্পে এলাইনমেন্ট পরিবর্তন করা হয়েছে। নদী তীর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও গ্রামের ভেতর দিয়ে নতুন করে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে মাটি এনে বাঁঁধ নির্মাণেল কথা থাকলেও নদীর পাড় কেটে বালি মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। যার স্থায়ীত্ব নিয়ে শঙ্কা রয়েছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে। নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধ তৈরির কোনো নিয়ম না থাকলেও বালির বাঁেধ কর্তৃপক্ষ কোনো আপত্তি করেননি বলে দাবি ৩নং পিআইসির সদস্য সচিব ইউপি সদস্য বাবুল মিয়ার।
উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন শরীফ বিপ্লব বলেন, তাহিরপুরে এবার প্রতিযোগিতা করে প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে। যেখানে ক্লোজার নেই সেখানেও ক্লোজারের বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। অক্ষত বাঁধে অতিরিক্ত মাটি বরাদ্দ দিয়ে সরকারের টাকা আত্মসাত করার পাঁয়তারা করছেন একটি চক্র। এটি মুটেও কাম্য নয়।
পাউবোর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী শওকতউজ্জামান বলেন, গেল অর্থ বছরে তাহিরপুরে ৬৮ প্রকল্পে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এবার বন্যায় বাঁধের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ক্লোজার তৈরি হয়েছে। তাই এবার প্রকল্প ও বরাদ্দ বেড়েছে। এবার ১১৩টি প্রকল্প ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়রা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত শনিবার পাঁচনাইল্লা বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহা পরিচালক আমিনুল হক ভূঁইয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করতে পিআইসিদের নির্দেশ প্রদান করেন এই কর্মকর্তা।