প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পর সিজার অপারেশন’। সত্যি বিস্ময়কর। গত শক্রবার (২৭ জানুয়ারি ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ প্রতিবেদেনের শিরোনাম এটি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হাওর অঞ্চলের গর্ভবতী মায়েদের নিরাপদ প্রসব নিশ্চিতে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার চালু করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ১৯৭৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পর এই প্রথমবারের মতো সিজারের মাধ্যমে গত বুধবার বিকালে উপজেলার বীরনগর গ্রামের মুর্শেদ আলীর স্ত্রী শাবানা বেগম’-এর এক ‘কন্যা সন্তান’ প্রসব করানো হয়েছে।
অবহেলিত হাওরাঞ্চলের আরও অবহেলিত তাহিরপুরে আজ থেকে ৪৫ বছর আগে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা ছিল সত্যিকার অর্থেই একটি সাফল্যের ও উন্নয়নের মাইল ফলক। আর সেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পর প্রসূতির সন্তান প্রসবজনিত সিজার অপারেশন চালু হওয়াটা হলো সত্যিকার অর্থে সাফল্য ও উন্নয়নের আর একটি মাইল ফলক। কিন্তু এই দুই মাইল ফলক নির্মাণের মাঝখানে সাফল্য উন্নয়নের স্থবিরতার বিস্তার ও তার দৈর্ঘ্য সত্যিকার অর্থে বিস্ময়কর একটি সমাজবাস্তবতার বিস্তার ঘটিয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আমাদের প্রশ্ন হলো এই দুই সাফল্যের মধ্যেকার সময়ে বাংলাদেশের সাফল্য ও উন্নয়নের কার্যক্রমগুলো কে বা কারা স্থবির করে রেখেছিল এবং কেন, কার স্বার্থে? ৪৫ বছর আগে যে-সাফল্য ও উন্নয়নের শুরু তা মাঝপথে থেমে গেলো কেন? কারা দেশের উন্নয়নকে স্থবির করে দিয়ে বিদেশে গিয়ে নিজেদের চিকিৎসা করাতে, দেশে নিজের ছেলে মেয়েকে না পড়িয়ে বিদেশে পড়াতে, দেশের মাটিতে নিজের বাড়ি না বানিয়ে বিদেশে বাড়ি বানাতে, দেশে অর্থ বিনিয়োগ না করে বিদেশে অর্থবিনিয়োগ করতে এতো আগ্রহী হয়ে উঠলো ? এর উত্তর অনেকেই দিয়েছেন। এই সম্পাদকীয়তে তার ফিরিস্তি দিতে চাই না, সেটা অনেক লম্বা হয়ে যাবে। শুধু বলতে চাই, আর যা-ই করুন, ব্যক্তিগত ও স্বশ্রেণির স্বার্থে অন্ধ হয়ে কেউ দেশের উন্নয়নের লাগামটা টেনে ধরবেন না, যে-উন্নয়ন ‘বীরনগর গ্রামের মুর্শেদ আলীর স্ত্রী শাবানা বেগম’-এর সন্তান প্রসবের আপদকালে সিজার অপারেশনের সুযোগ করে দেয়। দেশের ধনিরা বিদেশে সম্পদপাচার না করে দেশের মাটিতে ব্যবসা করুন, শিল্পকারখনা করুন। দেশের মানুষ কাজ পাবে, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমবে, নিরন্নরা দু’মুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবে, সকলেই শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থান পাবে। গরিব মানুষদেরকে নিংড়ে নিয়ে আখের ছুবড়ার মতো ফেলে দেবেন না, অপারেশনের সুবিধাকে নির্বিচারে সকল প্রসূতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করে টাকা রোজগারের ধান্ধা করে তোলবেন না। আর যদি তাই করেন এর ফলও ভালো হবে না। শেষে আমও যাবে ছালাও যাবে। সামাজিক পরিবর্তনকে রুখা যাবে না, কেউ কখনও রুখতে পারে নি। যারা রুখতে গেছে তারা ইতিহাসের চাকার তলে চিড়ে চেপ্টা হয়ে মরেছে।