শহীদনূর আহমেদ ::
শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন হাওরে তোড়জোড় করে চলছে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। নির্ধারিত সময়ের মাত্র এক মাসে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বাঁধ নির্মাণের তদারকিতে থাকা পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন বলছে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দৃশ্যমান হবে উপজেলার সকল হাওরের বাঁধ। প্রশাসনের এমন আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না জেলার সর্ববৃহৎ ফসলের হাওরের দেখার হাওরের কৃষকরা। হাওরের উথারিয়া পাথারিয়া ক্লোজারটি কৃষকদের কাছে বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত হলেও এখন নতুন আতঙ্ক হাওরের চাইয়া কিত্তা ক্লোজার। ক্লোজারটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, চাইয়া কিত্তা এলাকায় মহাসিং নদীর পাড়ে ৩নং প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধের কাজে মাটি ফেলা হচ্ছে। বাঁধের মধ্যভাগে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ধীরে ধীরে এই গর্ত বৃহৎ আকারে পরিণত হচ্ছে। আঁড় দিয়ে মাটি ফেলা হলেও দুই দিকে মাটি দেবে গর্তের সাথে মিশে যাওয়ায় বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীতে পানি আসলে প্রথম ধাক্কায় বাঁধের নিচের ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত করে গর্তে সাথে মিলিত হয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে হাওরে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে চাইয়া কীত্তার গর্তটি ভরাট না করলে ঝুঁকিতে থাকবে পুরো দেখার হাওরের বোরো ফসল।
কৃষক হজর আলী বলেন, আমি দেখার হাওরের ৯ কেয়ার জমি চাষ করেছি। বাঁধের কাজ সময়মতো হইলে চিন্তা মুক্ত থাকি। চাইয়া কিত্তায় ভয়ংকর গর্ত হয়ে গেছে। এই গর্ত ভরাট না করলে বাঁধ টিকানো যাবে না। সরকার এতো বরাদ্দ দিতেছে যদি এই ‘ডর’ ভরাট না করে তাহলে কোনো লাভ হবে না।
৩নং প্রকল্পে বাঁধ নির্মাণে ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ক্লোজারটির গর্ত ভরাট করতে এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ এই ক্লোজারটিতে মাটি ভরাটের বরাদ্দ দিয়ে হাওরকে সুরক্ষিত রাখার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ কৃষকরা। তবে চাইয়া কিত্তা ক্লোজারকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা পাউবো অফিস।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পাউবো’র শাখা কর্তকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন, ৩নং পিআইসির বরাদ্দ পর্যাপ্ত না। গর্ত ভরাট করতে বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন। আমরা ইতোমধ্যেই কর্তৃপক্ষের কাছে চাইয়া কিত্তা ক্লোজারে মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ চেয়েছি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা এই ক্লোজারটিকে দেখছি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার উজ জামান বলেন, উপজেলায় সকল হাওরে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো। দেখার হাওরের যে কয়টি প্রকল্প রয়েছে তারমধ্যে চাইয়া কিত্তা ক্লোজারটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্লোজারটিকে নিরাপদ করতে যা যা করণীয় তা করা হবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামছুদ্দোহা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো আমরা আগে করছি। চাইয়া কিত্তাও ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। এই ক্লোজারের গর্ত ভরাট করতে বরাদ্দ বাড়াতে হলে তা করতে হবে। আমরা চাই যেকোনো মূল্যে কৃষকের বোরো ফসল সুরক্ষিত থাকুক।