শহীদনূর আহমেদ ::
হাওরের বোরো ফসলের সুরক্ষায় গেল অর্থ বছরের চেয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে এবার ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে অতিরিক্ত বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করেছে উপজেলা পাউবো অফিস। গেল বছরের চেয়ে চলতি বছরে প্রকল্প ও বরাদ্দের পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ায় ফসলরক্ষা বাঁধ কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট হাওরপাড়ের কৃষক ও সচেতন মহলে। সাম্প্রতিক বন্যায় বাঁধের ক্ষয়ক্ষয়তি ও ডিজাইন লেভেলের পরিবর্তন আসায় প্রকল্প ও বরাদ্দ বেশি হচ্ছে বলে দাবি পাউবো অফিসের। তবে প্রকল্প বৃদ্ধিতে বন্যার অজুহাত মানতে নারাজ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। অজুহাত দেখিয়ে প্রকল্প ও বরাদ্দ বৃদ্ধি করে সরকারি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারার অভিযোগ করেছেন তারা।
জানা যায়, চলতি (২০২২-২০২৩) অর্থ বছরে ৫৬টি প্রকল্পের চাহিদা চেয়ে ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাঁধ নির্মাণের জন্য ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা পাউবো অফিস। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। গেল (২০২১-২০২২) অর্থ বছরে ৩৫ প্রকল্পে ২৩ কিলোমিটার বাঁধের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এবার ৭ কিলোমিটার বাঁধের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ৩০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আর এই অতিরিক্ত ৭ কিলোমিটারে গেলবারের চেয়ে সাড়ে ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া এবার গেল অর্থ বছরের চেয়ে ২১টি প্রকল্পও বেশি চাওয়া হয়েছে।
চলতি বছরে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় প্রকল্প ও বরাদ্দ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও হাওর বাঁচাও নেতাকর্মীর মধ্যকার মতবিনিময় সভায় সংগঠনের নেতারা দাবি করেন বিশ^ম্ভরপুর উপজেলাসহ জেলার পাঁচটি উপজেলায় অস্বাভাবিকভাবে প্রকল্প ও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গেল বছরে যেখানে একটি প্রকল্প ছিল সেখানে দুই থেকে তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া বৃদ্ধিকৃত অনেক প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় বলে দাবি করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। এ সময় বিশ^ম্ভরপুর উপজেলাসহ যেসব উপজেলায় অতিরিক্ত বরাদ্দ ও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সেসব প্রকল্পের যাচাই-বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দিয়েছেন পাউবো’র প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম।
এদিকে বাঁধ নির্মাণকাজের শুরু থেকেই পিআইসি গঠনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট হাওরপাড়ের কৃষকদের প্রাধান্য দেয়ার কথা থাকলেও হাওরে জমি নেই এমন ব্যক্তিকে পিআইসিতে রাখা হয়েছে। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পে রাখাসহ প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পিআইসি গঠনের অভিযোগ করেছেন একাধিক কৃষক। ইতোমধ্যে পিআইসি ও প্রকল্প গঠনে জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক পৃথক অভিযোগ দিয়েছেন জীবন চন্দ্র তালুকদার ও আব্দুর রহীম নামের দুই কৃষক।
চলমান ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের ব্যাপারে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, আমাদের উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৩১টি প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছি। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২৪টিতে কাজ চলমান রয়েছে। বরাদ্দ ও প্রকল্প বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন, এবার সকল উপজেলায়ই প্রকল্প বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশ^ম্ভরপুরে এবার ক্লোজার বেশি হওয়ায় বরাদ্দ বেড়েছে। গেল বছর বিশ্বম্ভরপুরে ৬টি ক্লোজার ছিল এবার ২১টি ক্লোজারে ভাঙ্গা বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া এবার মাটির দর বেশি ও বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ার কারণে বরাদ্দ ও প্রকল্প বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রকল্প ও বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যাপারে হাওর বাঁচাও আন্দোলন, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল বলেন, গেল বারের চেয়ে এবার প্রায় ২০০টি প্রকল্প বৃদ্ধি করা হয়েছে। বরাদ্দও ৫০ কোটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বন্যার অজুহাত দেখিয়ে যত্রতত্র প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি অতিরিক্ত প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা প্রয়োজন। এসব প্রকল্পে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প থাকতে পারে।