শহীদনূর আহমেদ ::
গেল বছরের চেয়ে চলতি অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বেড়েছে দ্বিগুণ। গেল বছরের চেয়ে এবার কয়েক গুণ অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ ও বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অজুহাত সংশ্লিষ্টদের। তবে এসব প্রকল্পের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারার অভিযোগ করছেন সচেতন কৃষকসহ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা। নির্ধারিত সময়ের দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো ৯০ ভাগ প্রকল্পে কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে পিআইসির অনুমোদন দিতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওর, কাংলা, খরচা, জোয়ালভাঙ্গা, ডাউকিসহ কয়েকটি হাওরের ফসলের সুরক্ষায় ৭১টি প্রকল্পের চাহিদা পাঠানো হয় জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাছে। যাচাই-বাছাই শেষে ৬০ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ। ৫২ কিলোমিটার বাঁধের প্রাক্কলন তৈরি করে ৬০ প্রকল্পের জন্য ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ সদর প্রকল্পের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৬টি। ১৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। সেই হিসেবে চলতি অর্থ বছরের চেয়ে এবার প্রকল্প বরাদ্দের পরিমাণ দ্বিগুণ। তাছাড়া গেল বছরের চেয়ে এবার বাঁধে দৈর্ঘ্যের পরিমাণ চারগুণ।
এদিকে পাউবোর পক্ষ থেকে সদর উপজেলায় অনুমোদিত ১৮ প্রকল্পের মধ্যে ৮টিতে কাজ শুরু করার দাবি করা হলেও বাস্তবের সাথে মিল পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কাংলার হাওরের ৮নং পিআইসিতে কাজ মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। একই হাওরে অপর দুই পিআইসি বড়ভাঙ্গা উত্তর ও বিরামপুর বল্লবপুর পিআইসিতে এখনও কাজ শুরু হয়নি।
৮নং পিআইসির সভাপতি আনোয়ার মিয়া বলেন, ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও কাজ শুরু করেছে ২৬ ডিসেম্বর। পিআইসি নিয়ে আসতে দেরি হইছে তাই সময় মতো কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে কাজ দৃশ্যমান করে নিতে পারবো।
সদর উপজেলার খরচার হাওরে বেশি পিআইসি থাকলেও একটিতেও কাজ শুরু হয়নি। জোয়ালভাঙ্গা ও লালপুর ক্লোজারে মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়েছে মাত্র।
ফসল রক্ষাবাঁধের কাজের এমন অবস্থায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। অপরদিকে, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
কাংলার হাওরের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, গত বছর পাহাড়ির ঢলের কারণে আমি ১২ কেয়ার জমির ধান ঘরে তুলতে পারিনি। এবারও অনেক আশা ভরসা নিয়ে জমি চাষ করতেছি। সময় মতো আর ঠিক মতো কাজ না হলে জমি চাষ কইরাও লাভ অইতো নায়।
সোনাই মিয়া বলেন, একটা বাঁধে কাজ অইছে। বাকি দুইটায় কাজ শুরু হইছে না। সময়মতো কাজ শেষ হলে ফসলের নিরাপত্তা পাই।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি স্বপন দাস বলেন, ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু দুই সপ্তাহেও ৯০ ভাগ বাঁধে কোনো মাটিই পড়েনি। গেল বারের চেয়ে অতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ করার সাথে বরাদ্দও দ্বিগুণ করা হয়েছে। আমরা মনে করি প্রকল্পের আরও যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। এসবের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় একাধিক প্রকল্প থাকতে পারে। এতে সরকারের অনেক টাকা অপচয় হবে।
পান উন্নয়ন বোর্ডের সদর উপজেলার এসও আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, আমরা ৭১টি প্রকল্পের চাহিদা পাঠিয়েছিলাম। ৬০টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছি। ৮টির কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ দ্রুতই শুরু হবে।
গেল বারের চেয়ে চলতি অর্থ বছরে প্রকল্প বেশি গ্রহণের কারণ হিসেবে জেলা পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গেলবার পর পর বন্যায় বাঁধের অনেক ক্ষতি হয়েছে তাই এবার প্রকল্প বেড়েছে। আমরা চাই দ্রুততম সময়ে বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ করতে।