1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সুরমা নদী : কীটনাশক প্রয়োগে মাছ শিকারের হিড়িক

  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সুরমা নদীতে মাছ শিকারে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় অসাধু মাছ শিকারিরা এই কীটনাশক ব্যবহার করে আসছেন। কীটনাশক ব্যবহারে মাছ শিকার বন্ধের দাবি স্থানীয়দের।
প্রকৃত মৎস্যজীবী অনেকেই জানান, এই শীত মওসুমে প্রতিদিন নদীর কোনো না কোনো স্থানে কতিপয় ব্যক্তিরা কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছেন। মাছ শিকারের সময় নদীর কিনারে উজানে পানির ¯্রােতে অন্তত ৩শত গজ দূরে কীটনাশক ব্যবহার করেন। কিছুক্ষণ পর নদীর ভাটিতে কীটনাশকের দুর্গন্ধে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডাঙায় লাফিয়ে উঠে। এই কীটনাশক প্রয়োগে বেশিরভাগ গলদা চিংড়ি ধরা পড়ে। রাতে যে কোনো সময় অথবা সকালে কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ শিকার হয় বেশি। কীটনাশক প্রয়োগের মাছ বাজারেও শহরের বিভিন্ন স্থানে অথবা বাসায় বাসায় গিয়ে ফেরি দিয়ে বিক্রি করা হয়।
সদর উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও এলাকায় সুরমা নদীতে, নয়া ব্রাহ্মণগাঁও, হরিনাপাটি, বিরামপুর এলাকায়, শহরতলির ধারারগাঁও, রহমতপুর, ইব্রাহীমপুর, পূর্ব ইব্রাহীমপুর, পুরান লক্ষণশ্রী, টুকেরগাঁও, হবতপুর, শহরের নবীনগর, ষোলঘর, রিভারভিউ, লঞ্চঘাট, আরপিননগর, মোহনপুর ইউনিয়নের জয়নগর এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি, সোনাপুর, নুরপুর প্রভৃতি এলাকায় অসাধু শিকারিরা সুরমা নদীর পানিতে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। এদিকে জামালগঞ্জ উপজেলার জামালগঞ্জ, সাচনা, চানপুর, লক্ষ্মীপুর প্রভৃতি এলাকায় কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ শিকার করে আসছেন অসাধু মৎস্যজীবীরা। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রকৃত মৎস্যজীবীদের।
হবতপুর গ্রামের প্রকৃত মৎস্যজীবী আপ্তর আলী বলেন, ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা নদীতে কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকার করে আসছেন। এসব লোকদের আইনের আওতায় আনার দাবি আমাদের।
আরপিননগরের প্রকৃত মৎস্যজীবী সুবেল মিয়া বলেন, যারা দেশ ও জাতির শত্রু, তারাই নদীতে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে থাকেন। শুধু মাছ শিকারি নয়, কীটনাশক ব্যবসায়ীরা গোপনে চিংড়ি মাছের ছবি সম্বলিত কীটনাশকের বোতল বিক্রি করেন। মাছের ছবি দেখে দেখে নদীতে কীটনাশক প্রয়োগকারীরা কিনে আনেন। এদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।
রহমতপুর গ্রামের প্রকৃত মৎস্যজীবী তৈমুল হক বলেন, সুরমা নদীর যে এলাকায় কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, ওই এলাকায় নদীর পানি ব্যবহার করা যায় না অন্তত ২-৩ দিন। দূষিত এই পানি গরু-ছাগলে পান করলে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়। এই কাজে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।
পুরান লক্ষণশ্রী গ্রামের প্রকৃত মৎস্যজীবী ভূষণ বর্মণ বলেন, প্রত্যেক মৎস্যজীবী গ্রামে রয়েছে একাধিক ব্যক্তি। তাদের নেশা ও পেশা কীটনাশক প্রয়োগে মাছ শিকার করা। তাদের নাম পরিচয় জানা যাবে যারা চিংড়ি মাছ বিক্রি করেন বাসা-বাড়িতে ফেরি দিয়ে। এতে আইনের আওতায় আনা জরুরি প্রয়োজন।
রামনগর গ্রামের প্রকৃত মৎস্যজীবী সাচ্চু মিয়া বলেন, শুধু মৎস্যজীবী নন, অমৎস্যজীবীরাও কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ শিকার করে আসছেন।
শহরের একাধিক কীটনাশক ব্যবসায়ী জানান, তাদের কাছ থেকে অনেকে কীটনাশক কিনে নেন। তারাতো এই ‘সাইফার মেথিন ১০ ইসি’ নামক গ্রুপের কীটনাশক বিক্রি করেন জমিতে পোকা মাকড় নিধনের জন্য। কিন্তু এক শ্রেণির লোক এটা নদীতে প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে আসছেন।
শহরের কীটনাশক ব্যবসায়ী রমজান মিয়া বলেন, প্রতিদিন কীটনাশক ওষুধের বোতল অনেকে কিনে নেন। কীটনাশক সাধারণত জমিতে পোকা নিধনের জন্য প্রয়োগ করা হয়। এদের অনেকে এই বিষ প্রয়োগ করে নদীতে মাছ শিকার করেন। এই মাছ আবার সবাই খাওয়ার জন্য কিনে নেন। এটা কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত জানি না। এটার প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন। আমরা ব্যবসায়ী আমাদের কাজ কীটনাশক বিক্রি করা। কে কোন কাজে ব্যবহার করে তা আমরা জানি না।
ধারারগাঁও গ্রামের আবু তাহের বলেন, এবারও বিভিন্ন স্থানে কীটনাশক প্রয়োগ করে অসাধু চক্রের লোকজন মাছ শিকার করে চলেছেন। এভাবে মাছ শিকার করলে মাছের বংশ ধ্বংস হবে চিরতরে। এটা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্র্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেয়া উচিত।
মইনপুরের সুজন মিয়া বলেন, শীতের মওসুমে কয়দিন পর পর নবীনগর ও ধারারগাঁও এলাকায় সুরমা নদীর পানিতে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে অন্য এলাকার লোকজন। তারা কীটনাশক প্রয়োগ করে দ্রুত চলে যায় এলাকা ছেড়ে। পরে আবার নদীর ¯্রােতের ভাটিতে গিয়ে সাধু সেজে ডাঙায় লাফিয়ে উঠা মাছ ধরে বস্তায় ভর্তি করে নিয়ে যায়।
শহরের তেঘরিয়ার রহিম মিয়া বলেন, শুকনো মওসুম আসলে নদীতে পানি ¯্রােতের গতিবেগ কমে আসে। এই সময় অসাধু মাছ শিকারীরা নদীতে বিষ প্রয়োগ করেন। কিছুক্ষণ পর বিষের তীব্র দুর্গন্ধে নদীর কিনারে ভেসে উঠে মাছ। চিংড়ি মাছ নদীর তীরে লাফিয়ে উঠে। এ সময় যারা বিষ প্রয়োগ করেন তারাই আবার সাধু সেজে নদীর কিনার থেকে মাছ কুড়িয়ে নেন।
নদী পারাপারে ব্যস্ত থাকা নৌকার মাঝি শহীদুল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবারেও ষোলঘর এলাকার নদীতে, রিভারভিউ এবং লঞ্চঘাট এলাকায় বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। আমি নিজেও ডাঙ্গায় লাফিয়ে উঠা মাছ ধরেছি। নদীতে প্রয়োগ করা বিষের দুর্গন্ধ সহ্য করার মতো নয়।
জগন্নাথপুর গ্রামের সুনু মিয়া বলেন, নদীতে জাল ফেললে প্রায়ই বিষের বোতল পাওয়া যায়। স্থানীয় কিছু চিহ্নিত লোক এই অপকর্মে লিপ্ত আছে। নদীতে কীটনাশক বিষ প্রয়োগকারী এসব চিহ্নিত লোকজন মৎস্য অফিসের সাথেও সম্পর্ক রেখেছেন।
জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সহ-সভাপতি মো. আলাউর রহমান বলেন, যারা মাছ শিকার করেন এবং বিক্রিও করেন, তাদের মধ্যে এক শ্রেণির লোক কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ শিকার করেন। এসব বিষ প্রয়োগে নদীর একাধিক অভয়াশ্রম ঝুঁকিতে আছে। নদীতে বিষ প্রয়োগকারী লোকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত।
সুরমা নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার বিষয়ে জানতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল ম-ল এবং সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত দে’র সাথে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও তারা কল রিসিভ করেন নি। তবে মঙ্গলবার বিকেলে কল রিসিভ করে উত্তেজিত হয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল ম-ল বলেন, শুধু আমাকেই সবকিছু বলতে হবে। বুধবারে অফিসে আসেন সরাসরি কথা বলবো। আমি এখন ঢাকায় আছি। তিনি আরও বলেন, সদরের মৎস্য অফিসার আছে না! তাকেও তো জিজ্ঞেস করতে পারেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com