প্রেমিকাকে লাঞ্ছিত করার অপরাধে প্রেমিকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের রেওয়া জেলায়। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ১৯ বছরের এক প্রেমিকা ২৪ বছরের এক প্রেমিককে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। যুবক যুবতীর সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করবেন কিন্তু বিয়ে করবেন না। এই কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি যুবতীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন, মারধর করার সময় এমনকি তার মুখে লাথি পর্যন্ত মারেন। এই লাঞ্ছনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মধ্যপ্রদেশ সরকারের প্রশাসন তড়িৎ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে তৎপর হয়ে উঠেন। এ সম্পর্কে গত সোমবারের (২৬ ডিসেম্বর ২০২২) দৈনিক যুগান্তরের সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘প্রেমিকার মুখে লাথি মারা সেই যুবকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন।’ সংবাদে বলা হয়, মধ্যপ্রদেশের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘রেওয়া জেলার মউগঞ্জ এলাকায় এক যুবতীর সঙ্গে হওয়া বর্বরতার ঘটনায় অপরাধী পঙ্কজ ত্রিপাটীকে গ্রেফতার করে তার বাড়িতে বুলডোজার চালানো হয়। তার ড্রাইভিং লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে।’ এই সংবাদ পরিবেশনের পর শেষে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, ‘মধ্যপ্রদেশের মাটিতে নারীদের ওপর অত্যাচারকারীদের কোনো রকম ক্ষমা প্রদর্শন করা হবে না।’
ভারতের মতো পুরুষতান্ত্রিক দেশে নারীর উপর লাঞ্ছনাকে ‘বর্বরতা’ বলে ধরে নেওয়া, তাও আবার সরকারের পক্ষ থেকে এবং তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে কালক্ষেপণ না করার ঘটনা ‘পশ্চিমে সূর্য উঠা’র মতোই সত্যি বিস্ময়কর। বলতেই হয়, প্রতিক্রিয়াশীল সামাজিক সংস্থিতির বিপরীতে এটি একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি। সে তুলনায় আমাদের দেশ পিছিয়ে আছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখানে এখনও ধর্ষিতা ও এমনকি ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসন অথবা সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে অবহেলার শিকার হয় এবং অত্যাচারীর হুমকির মুখে এলাকা ছাড়তে পর্যন্ত বাধ্য হয়। সরকার ও আইনের চোখে নিতান্ত তুচ্ছ কয়েকটি এনজিও মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সীমিত কার্যক্রমকে বাদ দিলে কেউ কিংবা ব্যাপক সমাজ-রাষ্ট্র তার লাঞ্ছনার সহমর্মী হয় না। একটা দেশে এমন বর্বর অন্যায় চলতে পারে না, এর বিহিত করার জন্যে সরকারের অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিত। ভারতের উত্তর ভারতের প্রশাসন যদি পারেন তবে আমাদের বাংলাদেশের প্রশাসন কেন পারবেন না। এটা এমন কী একটা কঠিন কাজ, অভিজ্ঞমহলের ধারণা, পুরুষতান্ত্রিকতার অচলায়তন ভেঙে দিতে কেবল একটু সদিচ্ছার প্রয়োজন এবং সার্বিক বিবেচনায় পুরুষতান্ত্রিকতার অচলায়তনটা ভাঙার এখনই উপযুক্ত সময়। দেশের উন্নয়নকে অব্যাহত ও প্রগতিশীলতার বাহক করে তোলার জন্য এটা একটা জরুরি জাতীয় কর্তব্য।