স্টাফ রিপোর্টার ::
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যখন অসহায় হয়ে পড়েছিল তখন সরকারের পাশাপাশি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল নরজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনসআরসি)। এ সংস্থার আর্থিক সহায়তায় ঘুরে দাঁড়ায় ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চার হাজার ৬৭৫টি পরিবার। এরমধ্যে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৫টি পরিবার এবং ১০ হাজার টাকা করে পেয়েছে ৬৪০টি পরিবার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত জুন মাসে স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন করতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নরজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনসআরসি)। এছাড়াও দুটি উপজেলার ১৪০টি পরিবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নলকূপ মেরামত ও বিশুদ্ধকরণ এবং ১৫ গ্রামের সংযোগ সড়ক ও দুটি স্কুল মাঠ মাটি ভরাট করে খেলার উপযোগী করা হয়েছে।
নরজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনসআরসি)’র ইমারজেন্সি রেসপন্স কোঅর্ডিনেটর গোলাম মেহেদী জানান, ২০২২ সালের জুন মাসে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে জাতীয় পর্যায়ে হিউম্যানিটেরিয়ান কোঅর্ডিনেশন স্ট্রাস্ক টিম সরেজমিন পরিদর্শনের আলোকে সুনামগঞ্জে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নে এনসআরসি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরে কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এ্যাফরট ফর রুরাল এডভান্সমেন্ট (ইরা) সাথে অংশিদারিত্বের মাধ্যমে ৬ মাসব্যাপী জরুরি সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।
ইরা’র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি বাড়ি-ঘর থেকে নেমে যাওয়ার পরপরই এনসআরসি’র অর্থায়নের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রকল্প গ্রহণের পর ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার দুটি করে ইউনিয়ন বাছাই করা হয়। এ দুটি ইউনিয়নের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বাছাইয়ের জন্য প্রতিটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়।
ইরা’র প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে বন্যা পরবর্তী তাৎক্ষণিক দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার দুটি করে ইউনিয়নের ৪ হাজার ৩৫টি পরিবারকে ১ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। যা প্রতিটি পরিবার পেয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে। এরপর ঘর মেরামতের জন্য ৬৪০টি পরিবারকে ৭৯ লাখ ৬৫০০ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যা প্রতিটি পরিবার পেয়েছে ১০ হাজার টাকা করে।
ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের মৃত কদরিছ আলীর স্ত্রী মালা বেগম জানান, বন্যায় তার কুঁড়েঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে আসবাবপত্র সবকিছু ভেসে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তার বসতভিটায় ফিরে দেখেন কিছুই নেই। মালা ১ ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি নিয়ে মহাবিপদে পড়েন। তখন তিনি জানতে পারেন পিআইসি কমিটি মানবিক সহায়তায় তার নাম দিয়েছে। এনআরসি ও ইরা’র লোকজন তার কাছে গিয়ে তাকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তার নামের নগদ একাউন্ট খুলে দিয়ে প্রথমে তাকে দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য তার নগদ একাউন্টে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়েছে এনআরসি ও ইরা। পরে ঘর মেরামতের জন্য তার একাউন্টে আরো ১০ হাজার টাকা দেয় ওই সংস্থা। সহায়তার এই টাকাগুলো পেয়ে তিনি ঘর মেরামত করে এখন বসবাস করছেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের ডাউকেরকারা গ্রামের মনা রবি দাসের স্ত্রী বাসমতি রবি দাস জানান, স্বামীসহ ছেলে মেয়ে নিয়ে ৯ সদস্যে তার সংসার। এনসআরসি ও ইরার সহায়তায় ঘর মেরামত করে এখন বসবাস করছেন। একই বক্তব্য পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের হাবিবা বেগম, আল আমিন সোহাগের।
দোয়ারাবাজার ইউনিয়নের পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহিদ জানান, ভয়াবহ বন্যায় আমার ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য ইরা ও এনআরসির কাছে কৃতজ্ঞ।
একই উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীমুল ইসলাম শামীম জানান, ইরা ও এনআরসির মানবিক সহায়তার কারণে আমরা জনপ্রতিনিধিগণ আমাদের এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কিছুটা উপকার করতে পেরেছি।