স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় তালাবদ্ধ থাকায় প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
জানা যায়, ২০১০ সালে এফআইভিডিবি খাদিমনগর সিলেটের নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কান্দিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল কদ্দুছ তাঁর রেকর্ডীয় জায়গা থেকে ১০ শতক জায়গা দান করেন। ভবন নির্মাণ শেষে ২০১১ সালে বিদ্যালয় চালু করে এফআইভিডিবি। নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে বিদ্যালয়টি চালু ছিল দীর্ঘদিন। গত ২০১৪ সালে বিদেশি ফান্ড বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষা গ্রহণ নিয়ে হুমকির মুখে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তখন বিদ্যালয় চালু রাখার উদ্যোগ নেন স্থানীয়রা। শিক্ষকের ভাতা এবং অন্যান্য খরচ স্থানীয়রা বহন করে বিদ্যালয়টি চালু রাখেন। তবে চলতি বছরের মার্চ মাসে জমি দাতা মো. আব্দুল কদ্দুছ এই ভবন দখল করতে তালা ঝুলিয়ে দেন বিদ্যালয়ে। অসহায় হয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জের হস্তক্ষেপে বিদ্যালয়ের তালা খুলে দেয়া হয় চলতি বছরের ২ এপ্রিল। গত ১৮ ডিসেম্বর পুনরায় বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন জমিদাতা মো. আব্দুল কদ্দুছ। পরে জমিদাতা ও স্থানীয়দের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমেনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার, ফরিদ মিয়ার ছেলে ইছাক মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের মেয়ে আকলিমা খাতুন, রানু বেগম, ছেলে শাহ আলম, আব্দুল কদ্দুছ, জজ মিয়ার ছেলে মিজান মিয়া এবং অপরপক্ষের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জমি দাতা মো. আব্দুল কদ্দুছ, ছেলে শাহ আরেফিন, আল আমিন আহত হন। এই ঘটনায় থানা ও আদালতে উভয়পক্ষের মামলা হয়।
এদিকে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যেহ বিদ্যালয়ে এসে বারান্দায় বসে দিন কাটাচ্ছেন। কবে বিদ্যালয় খুলবে এই অপেক্ষায় থাকেন শিশু শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, এই বিদ্যালয়ে অত্যন্ত ভাল শিক্ষক রয়েছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতি বছর ভাল ফলাফল করে আসছে শিক্ষার্থীরা। গত ২০১৯ সালের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৪ জন। ‘এ’ প্লাস পেয়ে পাস করেছে ১২ জন। অন্যান্যরা ভাল মানের গ্রেডে পাস করেছে। লেখাপড়ার মান ভাল থাকায় বর্তমানে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে ভর্তি আছে।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমাদের বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় লেখাপড়া করতে পারছি না। ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছুমাইয়া আক্তার বলেন, আমরা এই বিদ্যালয়েই পড়বো। এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে ভাল লাগে।
৫ম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী রুমা আক্তার বলেন, এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে না পারলে, ছেড়ে দেবো লেখাপড়া।
প্রধান শিক্ষক আমেনা খাতুন বলেন, আমাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জমিদাতা মো. আব্দুল কদ্দুছ ও তার ছেলেরা মারধর করেছেন এবং বিদ্যালয়ের টাকা পয়সা, আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল লুটপাট করে বাড়িতে নিয়ে গেছেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বিদ্যালয় ভূমিদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ বলেন, জেলার কোথাও এফআইভিডিবি ভবনে বিদ্যালয় চালু নেই। তাই আমার জায়গায় কেন হবে। এই জায়গা আমার নামে রেকর্ড আছে। যেখানে বিদ্যালয়ের জায়গা দিয়েছি। সেটা আসলে বিদ্যালয়ের জায়গা না। দাগ, খতিয়ানে ভুল আছে। তিনি বলেন, সকল ঝামেলা শেষ হলে, ভাল মানুষ দিয়ে কমিটি গঠন করে বিদ্যালয় পরিচালনা করবো কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মতো করে।
রঙ্গারচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, কান্দিগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও জায়গা দখলের চেষ্টা করছেন ভূমিদাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ। বর্তমানে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এলাকার শিশু শিক্ষার্থীরা অসহায় হয়ে পড়েছে। শিক্ষার অগ্রগতিতে এই বিদ্যালয় চালু রাখা জরুরি প্রয়োজন।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন বলেন, কান্দিগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া হবে।