সুনামকণ্ঠ ডেস্ক
ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের ১২ দিন পর মঙ্গলবার রাতে সংগঠনটির নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ স¤পাদক ওবায়দুল কাদের। নতুন কমিটিতে ছাত্রলীগ সভাপতি হয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। আর সাধারণ স¤পাদক হয়েছেন শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। আওয়ামী লীগ সাধারণ স¤পাদক কেন্দ্র ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। এবার কেন্দ্র ও ঢাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা চারজনের তিনজনই ডাকসুর নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি ছিলেন।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ছিলেন ডাকসুর সহসাধারণ স¤পাদক। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ডাকসুর সাহিত্য স¤পাদক আর সাধারণ স¤পাদক তানভীর হাসান সৈকত ডাকসুর সদস্য ছিলেন। শেখ ইনান ছিলেন না ডাকসুতে।
নতুন কমিটি বুধবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। আর বৃহ¯পতিবার বিকেলে নতুন কমিটির শীর্ষ পদধারীরা বিদায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব পেয়ে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। কমিটি ঘোষণার রাতে ঢাবির বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতা-কর্মীরা নতুন নেতাদের স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেন।
কী বলছেন ছাত্রলীগ নেতারা :
নতুন কমিটি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে ঢাবির বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সভাপতি সজিবুর রহমান সজিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনা যোগ্যদের থেকে অধিকতর যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। সভাপতি এবং সাধারণ স¤পাদক উভয়ের বিভিন্ন ইউনিটে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা যেকোনো প্রকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আরও বেশি উদ্যমী ও গতিশীল হবে বলে আমার বিশ্বাস।
একই হল ছাত্রলীগের সাধারণ স¤পাদক আবু ইউনুস বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ব্যাটন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ছাত্রনেতাদের হাতে উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের আলোকে ছাত্রসমাজের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা পূরণে নতুন নেতৃত্বের পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে।
ঢাবি ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ স¤পাদক সাফওয়ান চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা যে নেতৃত্ব আমাদের উপহার দিয়েছেন, তার মাধ্যমে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সকল পর্যায়ে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। নবনির্বাচিত নেতৃত্বের কাছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ছাত্রলীগই আমাদের প্রত্যাশা।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক আশিকুর রহমান অমি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে কমিটি দিয়েছে, সেই কমিটি অবশ্যই নান্দনিক এবং প্রগতিশীল। কেন্দ্র, ঢাবি এবং মহানগর ইউনিটগুলোতে পরীক্ষিত নেতারাই দায়িত্বে এসেছেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ রূপকল্প বাস্তবায়ন এবং যে ডেল্টা প্ল্যান, সেটিকে সফল এবং স্বার্থক করার জন্য বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভাই সবচেয়ে বেশি যোগ্য। আর সাধারণ স¤পাদক শেখ ইনান ভাই উনিও এর আগে যখন সাংগঠনিক স¤পাদকের দায়িত্বে ছিলেন, তখন দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অমি বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব কীভাবে শিক্ষার্থীসহ সব মহলের সঙ্গে স¤পৃক্ত থাকতে হয়, সেটি জানে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিয়ে তারা ইতোপূর্বে কাজও করেছে। এই কমিটিই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীবান্ধব। বর্তমান কমিটি ছাত্রলীগের যে রাজনৈতিক দর্শন, সেই দর্শনের ওপর কাজ করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তাদের আগামীর কর্মপরিকল্পনা দেশরতœ শেখ হাসিনার হাতকে আরও বেশি শক্তিশালী এবং মসৃণ করা। সর্বোপরি ছাত্রলীগকে আরও বেশি নান্দনিক করা।
বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক ফয়সাল উদ্দীন বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি সময় এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে নতুনত্বের পথে বাংলাদেশ হাঁটছে, সেটার উপযোগী। জননেত্রী শেখ হাসিনার মিশন, ভিশন বাস্তবায়ন এবং উনি যে স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছেন, সেটার জন্য যে রকম দক্ষ, সৃজনশীল রাজনৈতিক কর্মী দরকার, বর্তমান নেতৃত্ব সেই ধরনের রাজনৈতিক জ্ঞানের প্রমাণ দেখিয়েছে। আমি মনে করি তাদের হাত ধরে ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিটে সৃজনশীল ও স্মার্ট নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে।
অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের ভাষ্য :
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতির (সাদ্দাম হোসেন) দায়িত্বে এখন যিনি, তিনি ২০১৯ সালে ডাকসু ভবনে আমাদের ওপর যে হামলা হয়, সেই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নাসিম এবং নানক সাহেব এসে বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনার বিচার করা হবে, কিন্তু আমরা এখন দেখলাম, তাকে আরও পুরস্কৃত করা হলো। আর যিনি সাধারণ স¤পাদক, তিনি ক্যা¤পাসের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েছেন। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর রাজু ভাস্কর্যে আমাদের প্রোগ্রামে তিনি হামলা করেছেন, তবে আমার মতে, ছাত্রলীগে বর্তমানে যে নতুন নেতৃত্ব এসেছে, তারা অবশ্যই যারা নেতৃত্বের দৌড়ে প্রতিযোগিতায় ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে তুলনামূলক যোগ্য।
নতুন নেতাদের কাছে প্রত্যাশা জানতে চাইলে বিন ইয়ামিন বলেন, তাদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে অতীতে তারা যাই করেছেন, তা ভুলে গিয়ে ছাত্রলীগে নতুন ডাইমেনশন তারা দেবেন।
ছাত্রদল সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা নতুন নেতৃত্বের কাছে যেই প্রত্যাশা করে, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরাও তাদের কাছে সেটি প্রত্যাশা করি, তবে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করবে বা তাদের পাশে থাকবে, সেই প্রত্যাশা আমরা ছাত্রলীগের কাছে করি না। কারণ আমরা ভালো করেই জানি ছাত্রলীগ তাদের মাদার সংগঠন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাদের সাংগঠনিক নেত্রী যাই বলবেন, সেটিই তারা করবেন। গণতান্ত্রিক স্টাইলে তাদের কাছে প্রত্যাশা করে আমরা এর আগে বহুবার প্রতারিত হয়েছি।
শ্রাবণ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ক্যা¤পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত এবং ডাকসু নির্বাচন দেয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে নতুন কমিটির দ্রুত উদ্যোগ আমরা দেখতে চাই। এসব উদ্যোগ যদি তারা দেখাতে পারে, তাহলে আমরা তাদের কাছে প্রত্যাশা করব।
নতুন কমিটি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে শ্রাবণ বলেন, ক্যা¤পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা একসঙ্গে বসে আড্ডা দেয়া বা কথা বলার সেই রাজনৈতিক সৌজন্য এখন তো নেই। আমরা যদি একসঙ্গে আড্ডা বা ডিবেট করতে পারতাম, তাহলে তাদের স¤পর্কে আমাদের ব্যক্তিগত মন্তব্য করার সুযোগ থাকত। যেহেতু তারা সেই সৌজন্য বা কালচার রাখেনি, তাই তাদের স¤পর্কে আমাদের জানাশোনা নেই। সুতরাং এই বিষয়ে মন্তব্য করারও সুযোগ নেই।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির তুলনায় নতুন কমিটি ভালো হয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ফয়েজ উল্যাহ। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের বিগত কমিটিগুলো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এবার যারা কমিটিতে এসেছেন, তাদের অনেকেই আগে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তারা যেন এই ধারা অব্যাহত রাখেন।