বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে দুই মাস ধরে ‘স্থগিত স্থগিত’ নাটক চলছে। দুই মাসে তিনবার সম্মেলনের তারিখ দিয়েও ‘স্থগিত’ করা হচ্ছে সম্মেলন। উপজেলা ও পৌরসভার সবগুলো সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন করে জেলা সম্মেলনের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলে সম্মেলন হলে ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা নেতৃত্বে আসবে বলে মনে করেন তারা। তৃতীয় দফা ঘোষিত আগামী ২০ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ নভেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন কেন্দ্রের নির্দেশে সবগুলো সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর তৃণমূল উজ্জীবিত হয়। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থীতা ঘোষণা করে প্রচারণা চালান। তৃণমূলেও তারা যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন। কেন্দ্রীয় ও জেলার প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে সম্মেলনে তাদেরকে মূল্যায়ন করার দাবি জানান। তৃণমূলে সম্মেলন শেষ করে গত ৩০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ১৪ নভেম্বর দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই সংঘর্ষে জড়ান নেতাকর্মীরা। ওই দিনই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আহমদ হোসেন সংঘর্ষে জড়িত দুই নেতাকে আজীবনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। এরপর জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা সম্মেলন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘেœ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন চিকিৎসার কথা বলে তার নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলার সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলন স্থগিতের আবেদন করেন। গ্রুপিংয়ের কারণে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌরসভার সম্মেলনও স্থগিত করা হয়। তবে শাল্লা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সম্মেলন নিয়ে কোন সমস্যা না থাকলেও গত ১ ও ২ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেও সম্মেলন করা যায়নি।
এদিকে সাংগঠনিক ইউনিটে সম্মেলন স্থগিতের পরেই গত ৩০ নভেম্বর ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত করা হয়। এরপরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ১১ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ওই তারিখও পরিবর্তন করে ২০ ডিসেম্বর জেলা সম্মেলনের নির্দেশ দেন সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আহমদ হোসেন। তবে গত ৮ ডিসেম্বর আগামী ২০ ডিসেম্বর ঘোষিত জেলা সম্মেলনও কেন্দ্র স্থগিত করে দেয় বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা ও সুনামগঞ্জ-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, উপজেলা সম্মেলন ঘোষণার পর আমরা নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা তৃণমূলে প্রচারণা চালিয়েছি। তৃণমূলও সম্মেলন নিয়ে উজ্জীবিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ উপজেলা সম্মেলন স্থগিত করা হয়। তবে উপজেলা সম্মেলন হলে তৃণমূল থেকে সাহসী, সৎ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ আদর্শিক সৈনিক বেরিয়ে আসবে। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ রাজপথে আওয়ামী লীগের শক্তিকে সংহত করবে।
একই উপজেলার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ মুরাদ বলেন, জামায়াত, বিএনপি, হাইবিীড দিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সবগুলো উপজেলায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে অতীতে। হেফাজতের উত্থানের সময়ে তারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে নাজেহাল করেছে। নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলে তৃণমূলের বঞ্চিত, ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু যারা অতীতে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় তারা খুশি হয়েছে।
ছাতক পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহিদ মজনু বলেন, আমাদের উপজেলা ও পৌরসভার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর তৃণমূলের নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা উজ্জীবিত হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণায় তারা থমকে গেছেন। তারা খুবই হতাশ ও মর্মাহত। সংগঠন শক্তিশালী করে আগামীদিনের রাজপথ ধরে রাখতে নতুন কমিটির বিকল্প নেই।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি সাহেবের আবেদনের কারণে কেন্দ্র তিনটি উপজেলায় সম্মেলন স্থগিত করে। ছাতক ও দোয়ারা উপজেলায় সম্মেলন নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার কারণেও কেন্দ্র সম্মেলন স্থগিত করে। দুই দফা প্রদত্ত তারিখে জেলা সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে আগামী ২০ ডিসেম্বর জেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই দিনেও সম্মেলনের সম্ভাবনা নেই।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে তৃণমূলের কোন সম্মেলন হচ্ছে না। তাই আগামী ২০ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না।