1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

অতিকথার ফাঁদে বিএনপি

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
“আমান ভাই, আপনিই তো বলছেন ১০ তারিখ খালেদা জিয়াকে পল্টনের মহাসমাবেশে নিয়ে আসবেন। তো আমরা কি বসে থাকতে পারি?” কথাগুলো ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের। তিনি বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেন। আমান তখন মুচকি হেসে চুপ থাকেন। তবে তার পক্ষ হয়ে কিছুটা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদক আবদুস সালাম আজাদ। তিনি তখন বলেন, হারুন ভাই, এগুলো মঞ্চের কথার কথা। সিরিয়াস কিছু না। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই।
এরপর হারুন বলেন, শুধু আমান ভাই না, আপনাদের সিনিয়র নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক সাহেবও তো বলল নয়াপল্টনে নাকি বসে পড়বে। এ ছাড়া আপনারা নাকি ২৫ লাখ লোকের সমাবেশ করবেন। এত লোকের কোথায় জায়গা হবে? ঢাকায় তো ৫ লাখ লোক হলেই অচল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
বৈঠকে থাকা বিএনপির একজন নেতা গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়ে বলেন, আমাদের অতি আবেগী বক্তব্যের কারণে প্রশাসন আজ হার্ডলাইনে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগ দেবেন। ১১ তারিখ তারেক রহমান ঢাকায় নামবেন। ১০ তারিখের পর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এসব বক্তব্য বিএনপি নেতাদের। অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে তারা একের পর এক এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, যা রাজনীতির মাঠে হঠাৎ নতুন আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন মহলে ছড়াতে থাকে আলোচনার নানা ডালপালা। একসময় এসব অতিকথনে খোদ বিএনপির শীর্ষ নেতারাই বিরক্ত হন। যদিও পরে এমন অবস্থান থেকে পিছু হটে বিএনপি।
গত ৮ অক্টোবর ঢাকার এক সমাবেশে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কারও কথায় দেশ চলবে না। এ সরকারের বিদায় ঘটিয়ে তবেই আমরা ঘরে ফিরব।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আমান বলেন, আপনারা প্রস্তুতি নিন, কর্মসূচি আসছে। কাঁচপুর, টঙ্গী ব্রিজ, মাওয়া রোড, আরিচা রোড, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া- আমরা বললে সারা বাংলাদেশ বন্ধ করে দেবেন। তার এমন বক্তব্যের পরপরই প্রচার স¤পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী লক্ষ্মীপুরে বলেন, ১০ তারিখের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ চলবে। আর কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। শিগগিরই তারেক রহমান দেশে আসবেন। শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এক নেতা বিক্ষোভ সমাবেশে জানান, ১০ তারিখ সরকারের পতন হবে। ১১ তারিখ তারেক রহমান দেশে আসবেন। স্বাগত জানাতে এয়ারপোর্টে কোটি মানুষ জড়ো হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে- পল্টনের মহাসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। তখন এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ হবে আটলান্টিক মহাসাগরের মতো। ওই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন। আমান উল্লাহ আমানের কথায় তা-ই বোঝা যাচ্ছে। হয়তো পুলিশ বাসার গেটে বাধা দেবে। ম্যাডাম তো আর পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করবেন না। তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে যাবেন। আমরাও প্রতিবাদ শুরু করব সেখান থেকে। মার্চ ফর ডেমোক্রেসির সময়ও তা-ই হয়েছিল। এবারও তা-ই হবে। ১০ তারিখ আমরা এ সরকার ফেলে দিতে পারব।
এছাড়া ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক জানান, ঢাকায় ২৫ লাখ লোকের সমাগম হবে ১০ ডিসেম্বর। বিএনপি নেতারা প্রথমে বলেন, ১০ ডিসেম্বর হবে মহাসমাবেশ। পরে তারা কিছুটা সংশোধন করে জানান, এটা হবে বিভাগীয় গণসমাবেশ।
এরপর এসব বক্তব্য নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা হয়। কেউ বলেন, এসব কথার কথা, কেউবা রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে ধরে নেন। আবার কেউ এদিনকে বেশ গুরুত্ব দেন। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন কিছুটা বিরক্তির সুরে বলেন, দেশে কি আর কোনো ইস্যু নেই? আপনারা (সাংবাদিকরা) ১০ ডিসেম্বর নিয়ে এত উঠেপড়ে লেগেছেন কেন? রাজনীতির মাঠে অনেক ওরাটরি (বক্তৃতা) থাকে। উনি (আমান) একটা বক্তব্য দিলেন, আর তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। আমি দলের ¯েপাকম্যান (মুখপাত্র), যা বলি, সব খোলামেলা বলছি। ১০ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণ বিভাগীয় সমাবেশ হবে।
মঙ্গলবার প্রায় একই কথা বলেন দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদক আবদুস সালাম আজাদ। তিনি বলেন, এটাকে অতিকথন বলা যায়, আবার অতি আবেগপ্রবণও ধরা যায়। আসলে আমরা মঞ্চে কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে অনেক কথাই তো বলি, সব তো আর বাস্তবে মেলে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, দলের পরিকল্পনায় ক্ষতি করেছেন আমান ও ফারুক। তাদেরকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তারা বয়সে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে চলে গেছেন; কিন্তু ভাষাজ্ঞান এখনও হলো না। এমন লাগামছাড়া কথাবার্তা বলার কী দরকার ছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে সরকার নানাভাবে উসকানি দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের উত্তেজিত করে তাদের ফাঁদে পা ফেলানোর চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরীর মতে, রাজনীতির মাঠে অনেক কথাই হয়। নানা বক্তব্য আসে। সব আমলে নেওয়া যায় না। আর সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ বোরহান কবীর বলেন, আন্দোলনের পথরেখা ধরে এগোতে হয়। বিএনপি একটু বাড়াবাড়ি করছে। প্রথমে তারা বলছে, খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসবে সমাবেশে। পরে বোধোদয় হলে পিছু হটেছে। অতি আবেগী বক্তব্য আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com