শামসুল কাদির মিছবাহ
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলা একাডেমির সমন্বয়ে জেলা পর্যায়ে সাহিত্য মেলার আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। জেলা পর্যায়ের সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্ম জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ সাহিত্য মেলা। একজন সাহিত্যপ্রেমি হিসেবে সাধুবাদ জানাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তারই ফসল এটি।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রেও গভীরভাবে ভাবতেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি আয়োজিত ভাষা আন্দোলনের স্মরণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাহিত্য বিষয়ে তিনি বলেছেন, “জনগণের জন্যেই সাহিত্য। এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের লেখনীর মধ্যে নির্ভয়ে এগিয়ে আসুন, দুঃখী মানুষের সংগ্রাম নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করুন। কেউ আপনাদের বাধা দিতে সাহস করবে না।” (তথ্যসূত্র: সময়ের আলো)।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ ভালোবাসা ও মমত্ববোধ ফুটে ওঠে তাঁর জীবনকর্মে। তিনি বাঙালি জাতিসত্তা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকর্মকে গভীরভাবে অন্তরে লালন করতেন। তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনুরাগী। তিনি কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টিশীল কর্মের মূল্যায়ন এবং সাহিত্য কর্মের স্পৃহা গতিশীল করার প্রয়াসে জেলা সাহিত্য মেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
এই প্রথম সরকারের তরফ থেকে দুই দিনব্যাপী সাহিত্য মেলা নামে আলাদা বাজেট হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সাহিত্য মেলার প্লাটফরমও আলাদা। সাহিত্য মেলায় স্বরচিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ পাঠসহ থাকবে লেখক কর্মশালা। মোটকথা এটা স¤পূর্ণ কবি, সাহিত্যিকদের অনুষ্ঠান। যা সাহিত্যকর্মে উৎসাহ, উদ্দীপনা বাড়াবে বহুলাংশে।
সৃষ্টিকর্মের মূল্যায়ন স্বীকৃতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কাজের সম্মান ও মর্যাদা পাওয়া এটা মানুষের নীতিগত অধিকার।
অধিকার যখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, কাজের গতিশীলতা তৈরি হয়। যদিও লেখকের সৃষ্টিকর্ম কোনো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় নয়। নীরবে ও নিঃস্বার্থভাবে কর্ম সম্পাদন করাই লেখকের নীতিধর্ম। এবং লেখকের বড় পুরস্কার ও স্বীকৃতি হলো পাঠকের ভালোবাসা। লেখকের সৃষ্টিকর্ম যদি পাঠক মনে সাড়া জাগাতে পারে এবং পাঠকের বিচারে কর্মের মানমূল্যায়ন হয় তবে সেখানেই একজন সৃষ্টিশীল লেখকের সার্থকতা। তবু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্থান থেকে লেখকদের মূল্যায়ন করা সেটা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের উদারতা ও মহত্যের বহিঃপ্রকাশ। একজন সাহিত্যপ্রেমি হিসেবে সরকারের এমন মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
সরকারের সুন্দর এ মহতি উদ্যোগকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কিছু দুষ্টচক্র অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই জেলা প্রশাসনকে সামনে অগ্রসর হতে হবে। এবং প্রকৃত কবি, সাহিত্যিকরাই যাতে এর অংশীদার ও মূল্যায়িত হয় সেদিকে দৃষ্টিপাত রাখাও জরুরি। কোনো ‘অসাহিত্যিক’ যাতে নিবন্ধিত না হয়, সে দিকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
জেলা সাহিত্য মেলাকে প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর করতে দীর্ঘ দিন ধরে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুল্লাহ বিন রশিদ, জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেলসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। তাঁদের সকলের প্রতি রইল আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
পরিশেষে বলবো, সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে লেখক নিবন্ধন কার্যক্রম স¤পন্ন এবং প্রকৃত কবি, সাহিত্যিকগণ এর অংশীদার হোক এটাই কাম্য।