জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ::
ছাতকের বটেরখাল নদীর ভাঙন দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যে অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর তীর সংলগ্ন বসবাসকারী মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পাকা সড়র গিলে খেয়েছে বটেরখাল নদী। ফসলি জমি, অগণিত বাঁশ ঝাড় ও গাছপালা ইতিমধ্যেই চলে গেছে নদী গর্ভে। নদী ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে একটি মাদ্রাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শতাধিক পাকা-আধাপাকা বাড়ি, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পাশাপাশি আন্তঃইউনিয়ন গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কের আরো প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়ক নদীগর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ অবস্থায় নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নদীভাঙন আতঙ্কে দিন-রাত কাটছে তাদের। এলাকাবাসী ভাঙন প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মুখ হতে বিনোদনগর পর্যন্ত পাকা সড়ক দিয়ে এই এলাকার ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। এ সড়ক অন্যান্য সড়কের সাথে সংযুক্ত হয়ে উপজেলা সদর, জেলা ও বিভাগের সাথে সহজ সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে গোবিন্দগঞ্জ বাজার ও সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বটেরখাল নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শান্ত থাকলেও বর্ষায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। খর¯্রােতা বটেরখাল নদীর ভাঙনের মুখে পড়ে গোবিন্দগঞ্জ বাজারসহ গোবিন্দনগর গ্রাম। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নদী ভাঙনে এলাকার মানচিত্র বদলে গেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, গোবিন্দগঞ্জ বাজার হতে গোবিন্দনগর মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা পড়েছে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে। ফসলি জমি, অগণিত বাঁশ ঝাড়, গাছ-গাছড়া তলিয়ে গেছে নদীগর্ভে। সড়ক সংলগ্ন নদীর তীর এলাকায় যুগ-যুগ ধরে বসবাসরত মুচি সম্প্রদায়ের বসতভিটা গিলে খেয়েছে বটেরখাল নদী। ভিটে-মাটি হারিয়ে হতদরিদ্র মুচি সম্প্রদায়ের ১০-১২টি পরিবার এখন মানবেতর দিনাতিপাত করছে। তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, স্থানীয় মুজিবুর রহমানসহ এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। সরকারি সহায়তাবঞ্চিত মুচি সম্প্রদায়ের বসবাসের জন্য ভূমি ক্রয়ের উদ্যোগও নিয়েছেন তারা।
এদিকে, বর্তমানে নদী ভাঙনের মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ বাজার, গোবিন্দনগর মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গোবিন্দনগর গ্রাম। বটেরখাল নদীর ভয়াবহ ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মুচি সম্প্রদায়ের লোকজনদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
বুধবার সকালে বটেরখাল নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গোবিন্দনগর গ্রামের মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে যেখানে এখন নদী দেখা যাচ্ছে, এখানে ছিল এলাকার মানুষের ফসলি জমি, বসতঘর ও গাছ-গাছড়া। ভাঙন রোধ না করলে গোটা এলাকা এক সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
গোবিন্দনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস ছালাম আল মাদানী বলেন, নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে দ্বীন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গোবিন্দনগর মাদ্রাসা। মাদ্রাসার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কটি বিভিন্ন অংশে নিচের মাটি সরে গেছে। বিপজ্জনক অবস্থায় এ সড়ক দিয়ে এখন যান চলাচল করছে। সড়কটি রক্ষা করা হলে মাদ্রাসা, স্কুলসহ গোটা এলাকা রক্ষা হবে।
ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল বলেন, বটেরখাল নদীর ভাঙনে ভিটে-মাটিহারা মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পাকা সড়ক চলে গেছে নদীগর্ভে এবং আরো প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়ক বিলীন হওয়ার উপক্রম। এ সড়ক সুরক্ষা ও মুচি সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃপা দৃষ্টি কামনা করছি।
এসময় মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবু সালেহ আব্দুস সোবহান, মাওলানা আব্দুল হাকিম, মাওলানা দ্বীন ইসলাম, প্রভাষক মাওলানা মঈনুল হক মুমিন, কাউসার আহমদ, শাহজাহান আলী, মনসুর আহমদ, ছালিক আহমদসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।