1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বন্যার প্রভাব এসএসসি’র ফলাফলে : কমেছে পাসের হার

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২

মোসাইদ রাহাত ::
চলতি বছরের জুন মাসের মাঝামাঝি ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয় সুনামগঞ্জ। তখন অসংখ্য শিক্ষার্থীর বই-খাতা ভেসে গিয়েছিল বানের জলে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সারাদেশে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সোমবার ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে সুনামগঞ্জে পাসের হার অনেক কমে গেছে। এমন ফলাফলের জন্য ভয়াবহ বন্যাপরিস্থিতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফলাফলে দেখাযায়, এসএসসি পরীক্ষায় সুনামগঞ্জে পাসের হার ৭৯.২৬ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ বছর সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৪৭৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ১৮ হাজার ৬০৯ জন। জেলায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১০ হাজার ২১৬ জন ছেলের মধ্যে পাস করেছে ৮০০৫ জন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মেয়ে ১৩ হাজার ২৬৩ জনের মধ্যে পাস করেছে ১০ হাজার ৬০৪ জন। আর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৯৬৮ জনের মধ্যে ছেলে ৪০১ এবং মেয়ে ৫৬১ জন। জেলায় ছেলেদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৬ এবং মেয়ে ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
অন্যদিকে গতবছরের তুলনায় এ বছর রেকর্ড সংখ্যক জিপিএ ৫ পেয়েছে সুনামগঞ্জ। এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৬৮ জন। এরমধ্যে ছেলে ৪০৭ এবং মেয়ে ৫৬১ জন। কিন্তু গেল বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬২৭ জন। তবে, সিলেট বিভাগে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিকে সবার পিছনে রয়েছে সুনামগঞ্জ।
এবছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সুনামগঞ্জে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে জেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়। এ বছর স্কুলটিতে জেলার সর্বোচ্চ ৯৭টি জিপিএ-৫ এসেছে। সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২২৯ জন ছাত্র। এর মধ্যে পাস করেছে ২২৬ জন। জেলার আরেক প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সুনামগঞ্জ সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৩৯ জন ছাত্রী। এর মধ্যে পাস করেছে ২২৬ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩ জন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ভয়াবহ বন্যার কারণে শুধু সুনামগঞ্জ নয়, সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়েছে। শিক্ষার্থীর বই ও নিজস্ব নোটখাতা পানিতে ভেসে যাওয়ায় পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটেছে। এসব দিক বিবেচনায় পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে।
সরকারি সতীশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রী ক্রিসেন থিমাম বলেন, জিপিএ ৫ পাওয়ায় আমি অনেক খুশি। তবে এবছর বন্যার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ করে বন্যা চলে আসলো বই খাতা যা ছিল সবই ভিজে গিয়েছিলো। অনেকে বই পায় নাই। বই পড়া ছাড়াও অনেকেও পরীক্ষায় দিয়েছে। তারপরেও আমরা এই দুর্যোগটা কাটিয়ে পরীক্ষা দিতে পেরেছি এবং ভালো রেজাল্ট হয়েছে সেটি অনেক বড় পাওয়া।
সরকারি জুবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, সুনামগঞ্জের ইতিহাসে স্মরণকালে বন্যায় আমরা যারা পরীক্ষার্থীরা ছিলাম তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যেই বন্যা আসে। আমাদের বই খাতা পানিতে ভেসে যায়। তারপরেও আমাদের রেজাল্ট তুলনামূলক ভালো হয়েছে।
সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মোহাম্মদ মাসহুদ চৌধুরী বলেন, করোনা ও বন্যা না হলে আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আরও ভাল ফলাফল করত। তবুও আমরা জেলায় দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করেছি। এ জন্য খুব ভাল লাগছে।
সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুনসুর রহমান খান বলেন, আমি এখানে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে যায় সুনামগঞ্জ। এরমধ্যেও শিক্ষার্থীরা মনোবল হারায়নি। অনেকের বই খাতা ভেসে গিয়েছিল। অনেকে আবার পড়াশোনাও ছেড়ে দিচ্ছিলো। তাদের আমরা বুঝিয়ে আবার নিয়ে এসেছি। এই অবস্থায় ভালো ফলাফলে আমরা খুশি।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গতবছরের তুলনায় আমাদের পাসের হার এবছর কিছুটা কমেছে। যার কারণ ভয়াবহ বন্যা। তবে আমাদের জেলায় এবছর ৯৬৮টি জিপিএ-৫ এসেছে, এটি আমাদের গৌরবের।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, ভয়াবহ বন্যার কারণে অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর বইখাতা ভেসে গিয়েছিল। পরে পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়ে পরীক্ষার্থীদের পুনরায় বই সরবরাহ করা হয়। তবে অনেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব খাতা ভেসে যাওয়ায় তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকে যায়। এতে ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. কবির আহমদ বলেন, বন্যায় শহরের তুলনায় গ্রাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত অনলাইন সুবিধা না থাকায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে ছিল। চলতি বছরের ফলাফলে গ্রামের শিক্ষার্থীরা তাই তুলনামূলকভাবে কিছুটা পিছিয়ে আছে। এতে পাসের হার কিছুটা কমেছে। তবে ভয়াবহ বন্যার পর এমন ফলাফলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com