যে-কোনও পাঠক একটু সচেতন হলেই বুঝতে পারবেন, ধর্ষণ নিয়ে সংবাদ গণমাধ্যমের একটি নিয়মিত প্রসঙ্গ। প্রসঙ্গটি কোনওনা কোনওভাবে কি করে যেনো দেশের প্রায় সবক’টি গণমাধ্যমের কোথাওনা কোথাও স্থান পায়ই। বিষয়টি এমন যে, ধর্ষণের সংবাদ না দিলে গণমাধ্যমের চলে না। আসলে বিষয়টি এমন নয়, যদিও এমন মনে হয়। এমন হওয়ার একটি বাস্তব কারণ আছে। আর সে কারণটি হলো এই যে, সারা দেশের কোথাওনা কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে বা ক্রমাগত ঘটেই চলেছে এবং তার সংখ্যা অবশ্যই গণমাধ্যমে প্রকাশের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। সেটা অনুমান করা যায় যখন দৈনিক সুনামকণ্ঠে (শনিবার ২৬ নভেম্বর ২০২২) একটি উদ্ধৃত সংবাদ প্রকাশ হয়, ‘৯ মাসে ধর্ষণের শিকার ৮৩০ নারী’। বলাবাহুল্য, এই ৮৩০ ধর্ষণের ঘটনা সমাজ পরিসরে জানাজানি হয়ে গণমাধ্যম পর্যন্ত এসে তার পরিক্রমণ সমাপ্ত করেছে এবং কোনও কোনওটি হয় তো আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই পরিসংখ্যানের বাইরে যে ধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেনি এমনটা কিন্তু নয়, বরং হয়তো বেশি সংখ্যায়ই ঘটছে এবং সংবাদ হয়ে পরিবেশিত হচ্ছে না, জন জানাজানির বাইরে থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনার পরিসংখ্যানগত সত্য এটাই যে, বস্তুতপক্ষে সংঘটিত সব ক’টি ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমে পরিবেশিত হতে পারে এমন সম্ভাবনা নাকচ হয়ে যাচ্ছে এবং অনেক ধর্ষণের ঘটনাই বিভিন্ন সামাজিক সংস্কার ও প্রভাবশালী চক্রের চাপের কারণে ধামাচাপার শিকার হয়ে গণমাধ্যমে আসে না, প্রকারান্তরে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের অন্তরালে একটি অপ্রকাশিত ও পরিসংখ্যান বহির্ভূত পরিসংখ্যান তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে, অতীতের তুলনায় বর্তমানে আন্তর্জালিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধার প্রসার ঘটার কারণে বেশি হারে ধর্ষণের ঘটনার সংবাদ জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ার পরিসর তৈরি হয়েছে এবং এই সুবাধে সংবাদ প্রতিবেদনে ৯ মাসে ৮৩০টি ধর্ষণের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞমহলের ধারণা এই যে, সমাজনিয়ন্ত্রক আইনের প্রয়োগ কার্যত যথাযথ না হওয়া পর্যন্ত সামাজিক বাস্তবতা হিসেবে ধর্ষণ প্রবণতাকে প্রতিরোধ করা যাবে না।