পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা। প্রতি ইউনিটে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৩ পয়সা। নতুন দাম আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। দেশে গত ১২ বছরে ৯ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ (নতুন মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াই) এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দাম বাড়ানো হয়। এত কম সময়ে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নাগরিকদের জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ যোগ করবে- এটাই স্বাভাবিক। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাব দেয়া হয়। দাম ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। এ ব্যাপারে ১৮ মে কমিশনের গণশুনানি হয়। গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ভর্তুকি বাদে ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। ঋণ পেতে সরকারকে কিছু শর্তও দিয়েছে সংস্থাটি। সেখানে আইএমএফ ভর্তুকি সংস্কারের জন্য বলেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সরকার সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়। এর অংশ হিসেবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, ঘুষ লেনদেন আর লুটপাটের কারণে বিদ্যুৎ খাতে অপচয় বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে লোকসান ছিল ১১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় লোকসান। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) লোকসানের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আদর্শিকভাবে এ খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। এছাড়া বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় ভোক্তারা বছরে ৭ হাজার ৮৪৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এসব বন্ধ করা গেলে দেশে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১ টাকা ৫৬ পয়সা কমানো সম্ভব।
জানা কথা, বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব রকম দ্রব্যমূল্য ও সেবামূল্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হয় ভোক্তা সাধারণকে। তাই সাধারণ ভোক্তাদের সামর্থ্য তথা জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের দাম কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।