জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ::
প্রায় ৯ মাস ধরে তাহিরপুরের ৩টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে বন্ধ রয়েছে কয়লা আমদানি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চার শতাধিক আমদানিকারক। পাশাপাশি প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের মার্চ থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৯ মাস ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তারা আরও জানান, বড়ছড়া, বাগলী ও চারাগাঁও শুল্কস্টেশন দিয়ে নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে ভারত থেকে কয়লা আমদানি হয়। ২০১৪ সালে ভারতেরে মেঘালয়ের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে কয়লা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। পরে একটানা প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকে কয়লা আমদানি। এরপর পুনরায় আমদানি শুরু হলেও তা আর নিয়মিত হয়নি। বছরে তিন-চার মাস চলে আমদানি আর ৮-৯ মাস বন্ধ থাকে। অপরদিকে, কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছেন।
বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনের শ্রমিক আল-আমিন মিয়া বলেন, কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে ৩০ হাজার শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছে। আশায় আছি সরকার আমরার দিকে একটু চাইবো। আমরা আমাদের আমদানি চালু হইবো।
শুল্কস্টেশন এলাকার জয়বাংলা বাজারের ব্যবসায়ী জোসেফ মিয়া জানান, স্টেশনে আমদানি চালু থাকলে বেচা কেনা বাড়ে। কারণ শ্রমিকদের হাতে টাকা থাকে। বন্ধ থাকলে শ্রমিক বেকার, আমাদের ব্যবসায় ধস নামে। শুল্ক স্টেশনগুলো চালু থাকলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করবে। অন্যদিকে শ্রমিকরাও, বাঁচবে আমরাও বাঁচব।
ব্যবসায়ী জুনাব আলীসহ আমদানিকারকরা বলেন, এই তিনটি শুল্কস্টেশন থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু নানা কারণে আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার যেমন রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে, আমরা আমদানিকারকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখানকার কয়লার প্রচুর চাহিদা আছে। বন্ধ থাকায় ইন্দোনেশিয়ার কয়লা চাহিদা বাড়ছে। এখানকার কয়লা সারাবছর আমদানি করতে পারলে শুল্কস্টেশনগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য থাকবে, সরকারও রাজস্ব পাবে।
কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের জানান, কয়লা আমদানি করতে বাংলাদেশে কোনো সমস্যা নাই। ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা এলসি করা আছে। আমাদের দাবি শ্রমিক, আমদানিকারক ও সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে সরকার এই বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আবারও তিনটি শুল্কস্টেশন দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু করবে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দকার জানান, ভারতের সমস্যার কারণে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় শুধু ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সরকারও কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি শ্রমিকরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা আশা করছি সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে আবারও তিনটি শুল্কস্টেশন দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু করতে ব্যবস্থা নিবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, ভারতীয় কয়লা আমদানির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাজার হাজার শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এবং সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।