স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের লামাকাজি সেতু থেকে টোল বন্ধ, বাস টার্মিনাল সংস্কারসহ চার দাবিতে ৩৬ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট চলছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার পর্যন্ত চলবে জেলা বাস, মিনিবাস পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি ডাকা এ কর্মসূচি। সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুর এলাকার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনও বাস ছেড়ে যায়নি। এতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। অনেকেই সকালে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে না পেরে বাস স্ট্যান্ডে থেকে ফিরে আসেন।
গত বৃহ¯পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন জেলা বাস, মিনিবাস পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক। সুনামগঞ্জের এ সমিতি বলছে, তাদের কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে কোনো স¤পর্ক নেই।
সমিতি না বললেও বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে তাদের কর্মসূচির যোগসাজশ রয়েছে। শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন কেন পরিবহন ধর্মঘট দেওয়া হচ্ছে এ প্রশ্ন তাদের। নেতাদের দাবি, সরকারের নির্দেশ তথাকথিত এ ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার সিলেট আলিয়া মাদরাসার মাঠে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে সমাবেশ করবে বিএনপি।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় মল্লিকপুর বাসস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রীরা সিলেট যাওয়ার জন্য বাস স্টেশনে এসেছেন। বাস স্টেশনে এসে দেখেন সড়কে এলোমেলো ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে বাস। বিরতিহীন কাউন্টার বন্ধ। এই অবস্থায় দূর দূরান্ত থেকে এসে তারা দুর্ভোগে পড়েছেন।
তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় সীমান্ত গ্রাম নুর হোসেন বলেন, সিলেট যাওয়ার জন্য ৩০০ টাকা ভাড়ায় মোটর সাইকেল দিয়ে সুনামগঞ্জ বাসস্টেশনে এসেছেন। এসে দেখেন সিলেটে কোন বাস যাচ্ছেনা। রাস্তাও ফাঁকা।
ইসমাইল মিয়া বলেন, আমি গরিব মানুষ। কাজ করে খাই। ৩০০ টাকায় মোটর সাইকেল ভাড়া করে সুনামগঞ্জ স্টেশনে এসে দেখি কোন যানবাহন চলছে না। এখন জরুরি কাজে যোগ দিতে আমার সিলেট যেতে হয়। যাওয়ার কোন উপায় দেখছি না।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খিরদিপুরপুরের আয়ুব আলী জানান, মোটর সাইকেল ভাড়া করে সুনামগঞ্জ শহরে এসেছেন সিলেট যাওয়ার জন্য। সেখানে এক ব্যবসায়ীর অধীনে তিনি কাজ করেন। বাড়ি নিয়ে ছুটি এসেছিলেন। আজ সুনামগঞ্জে এসে জানতে পারেন দুদিনের পরিবহন ধর্মঘট। তিনি বলেন, আমি আজ স্টেশনে এসে দেখি আমার মতো অনেক মানুষ স্টেশনে জড়ো হয়েছেন। নারী, বৃদ্ধ ও শিশুসহ অনেকে দূর দূরান্তে যেতে চান। কিন্তু কেউ যানবাহন পাচ্ছেনা। দূর থেকে আসায় তাদের সময় ও অর্থ অপচয় হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জগাইরগাঁও গ্রামের আব্দুল্লাহ (৫৫) বলেন, আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শ্বশুর বাড়ি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছি। এখন স্টেশনে এসে দেখি সব বাস এলোমেলো রাস্তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সিলেটের উদ্দেশ্যে কোন বাস যাচ্ছেনা এবং আসছেও না। এখন কিভাবে যাবো উপায় দেখছিনা।
জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আনিসুল হক বলেন, আমাদের সম্মেলনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতেই পরিবহন ধর্মঘট করা হচ্ছে সরকারের সিদ্ধান্তে। জনগণ এখন সরকারকে লালকার্ড দেখাচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ হচ্ছে। সরকার বাস মালিকদের নিয়ে ধর্মঘট দিয়ে হাস্যকর কাজ করছে। আমরা কোনো বাধাই মানব না। আমাদের নেতা কর্মীরা পায়ে হেঁটে হলেও সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে পৌঁছে যাবে। অনেকেই সিলেটের পথে আছে আর অনেকেই পৌঁছে গেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ স¤পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল বলেন, আমাদের পূর্ব ঘোষিত সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতে এ ঘৃণ্যতম কাজ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ছয়টি বিভাগে সমাবেশ স¤পন্ন হয়েছে। সবগুলো বিভাগেই সমাবেশের দুদিন আগে থেকে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। শুক্রবার-শনিবার কোনো বাধাই আমাদের আটকাতে পারবে না। ৮ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে আমরা সমাবেশে যাবো।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি ডাকা এ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা যেসব দাবি উত্থাপন করেছেন, সেগুলো হলো- সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের লামাকাজি সেতু থেকে টোল বন্ধ; রেজিস্ট্রেশনহীন অবৈধ সিএনজি, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধ, সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনাল সংস্কার ও সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করা।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া বলেন, কোনো সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে নয়, আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত জেলার সুনামগঞ্জ-সিলেট ও জগ্ননাথপুর-ছাতক রুটে বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
সুনামগঞ্জ পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কেরর লামাকাজি সেতুতে টোল আদায় বন্ধ, মহাসড়কে সিএনজি চলাচল বন্ধ এবং সুনামগঞ্জ বাসস্টেশন আধুনিকায়নের দাবিতে আমরা পূর্বনির্ধারিত পরিবহন ধর্মঘট পালন করছি। কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আমরা ধর্মঘট পালন করছিনা।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল বলেন, আমাদের সিলেট মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের যোগদানে বাধা দিতেই সরকার পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এই ধর্মঘট ডেকেছে। এভাবে সরকারি অবরোধ দিয়ে আমাদের সমাবেশ থেকে জন¯্রােত আটকানো যাবেনা। তিনি বলেন, সরকার এই কাজ করে আরো নিন্দিত হচ্ছে।