স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজে এবার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকল্পে বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জেলা কমিটির সভায় এই তথ্য জানান সুনামঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার। তিনি বলেন, এবার বাঁধ নির্মাণের জন্য একশত কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এবার এক হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সার্ভে করা হবে। গতবারের বেড়ি বাঁধ নির্মাণে পিআইসিদের বকেয়া ছিল নয় কোটি টাকা। তিনি আরও জানান, এবার বাঁধ নির্মাণের জন্য জেলা কমিটিতে সদস্য থাকবেন ১৩ জন। এটা সরকারি নির্দেশনা। কিন্তু আমরা তা বর্ধিত করে ২৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি।
বৃহ¯পতিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এবারের বাঁধ নির্মাণ কাজে পিআইসি কমিটিতে যেসব সদস্য রাখা হবে, তা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে রাখতে হবে। যাদের জমি আছে তাদেরকে রাখতে হবে। তবে ভাল মানুষ হতে হবে। সঠিক লোককে নির্বাচন করা হবে। একটি পিআইসিকে একটি কাজ দেয়া হবে। কোনো কারণে বাঁধ ভাঙলে যেন পিআইসি পালিয়ে না যায়। তিনি বলেন, এবারের বাঁধ নির্মাণকাজ তদারকিতে জেলা প্রশাসনের অফিসারগণ মাঠপর্যায়ে থাকবেন।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আরও বলেন, বিগত সময়ে ভালমানের বাঁধ নির্মাণ হয়নি। যার কারণে বাঁধের নিচে দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পানি নির্গত হয়েছিল। এবার তা খেয়াল রাখতে হবে। বাঁধ নির্মাণের সময় এক ফুট মাটি ভরাটের পর কমপেকশন করতে হবে। তখন মাটি তাড়াতাড়ি বসবে। দুর্মুজ করতে এবং পরিমাণ মত ¯ে¬াপিং করতে হবে। কোনো অবস্থায় যেন বাঁধের পাশে থেকে মাটি উত্তোলন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ভেঙে যাওয়া একটি বাঁধের জন্য হাজার মানুষের কান্না। এবার বাঁধের কাজ ভাল করতে দুইটি মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার, পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. শামসুদ্দোহা, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আতাউর রহমান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সুমন মিয়া, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদিদ, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনোয়ার উজ জামান, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আলী আমজদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান। সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি) শেখ মহি উদ্দিন, আরডিসি মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, হাওরে একসময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হতো। পরে বাঁধের কাজে পিআইসির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষকে যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালের বন্যায় হাওরে ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে ঠিকাদার ও পিআইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও হয়। পরে বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে সরাসরি যুক্ত করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে।