1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মাছের আঁশ সংগ্রহে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা : রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার ::
ফেলে দেয়া মাছের আঁশ থেকে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন সুনামগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ীরা। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে প্রতিদিন মাছের ভেজা আঁশ সংগ্রহ করাসহ শুকিয়ে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
জানা যায়, বড় মাছ কেনার সময় ঝুটঝামেলা থেকে রেহাই পেতে বেশিরভাগ ক্রেতাই কেটে নেন মাছ। ইতোপূর্বে বড় মাছ কাটার সময় মাছের আঁশ চেষে ফেলে দিতেন ব্যবসায়ীরা। তবে সেই আঁশও যে টাকায় বিক্রি হয় তা জানতেন না অনেকেই।
গত পাঁচ বছর ধরে মাছের আঁশ সংগ্রহ ও বিক্রির ব্যবসা শুরু হয় শহরের মাছ বাজারে। এই ব্যবসায় স্বাবলম্বী হওয়ায় উৎসাহিত হয়ে যুক্ত হয়েছেন অনেকে। এখন বিভিন্ন মাছ বাজার থেকে আঁশ সংগ্রহ এবং বেচাকেনায় নিয়োজিত হয়েছেন অনেকে। প্রতিদিন মাছের আঁশ সংগ্রহ করে ও কেজি দরে বিক্রি করে একজন সংগ্রাহক দৈনন্দিন ভালো উপার্জন করছেন।
একাধিক আঁশ সংগ্রাহক জানান, প্রতিদিন জনে ৪-৫ কেজি মাছের আঁশ সংগ্রহ করতে পারেন। পরে স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। একই কেজি দরে বোয়াল মাছের ভুড়িও সংগ্রহ করে বিক্রি করেন তারা। স্থানীয় পাইকারেরা এই আঁশ ও ভুড়ি কিনে ভাল করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে মজুদ করেন। পরে দুই বা আড়াই মাস পরপর আঁশ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা ৪ থেকে ৫ শত কেজি শুকানো আঁশ বিক্রি করতে পারেন। এ সময় বোয়াল মাছের ভুড়িও বিক্রি করেন প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকা দরে। এসব আঁশ ও ভুড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনেক লাভ হয়। এই আঁশ দেশের বাইরে চীন ও জাপানে রপ্তানি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া কার্প জাতীয় মাছের চামড়াও শুকিয়ে বিক্রি করেন অনেক ব্যবসায়ী। মাছের চামড়া দিয়েও তৈরি হয় দামি ও বিলাসবহুল পণ্য। ব্যবসায়ীরা জানান, মাছের চামড়া দিয়ে দৃষ্টিনন্দন মানি ব্যাগ, বেল্ট, জুতা, জ্যাকেট তৈরি করা হয়।
মাছের আঁশ দিয়ে চোখের কৃত্রিম কর্নিকা তৈরি করা হয়। কৃত্রিম হাড়ও তৈরি হয় মাছের আঁশ থেকে। ওষুধি ক্যাপসুলের মোড়ক ও ঘড়ির পার্টস তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ওষুধের পাউডার হিসাবে ব্যবহার করা হয় মাছের আঁশ। এছাড়াও অনেক কসমেটিক্স ও অলংকার তৈরি করা হয় এই আঁশ দিয়ে। রিচার্জেবল ব্যাটারির পার্টস তৈরিতে বেশ কাজে লাগে মাছের আঁশ। বিভিন্ন রকমের কুটির শিল্পে মাছের আঁশ ব্যবহার করা হয়। যেমন ফুলদানি তৈরিতে, শো-পিস তৈরিতে মাছের আঁশের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাছের আঁশ ও কার্প জাতীয় মাছের চামড়া এবং বোয়াল মাছের ভুড়ির বর্জ্য থেকে হাঁস-মুরগীর খাবারও তৈরি করা হয়।
চীনা ও জাপানীরা মাছের আঁশ পাউডার করে স্যুপের সাথে মজাদার খাবার হিসাবে গ্রহণ করে থাকেন। বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি মুখরোচক করতে মাছের আঁশের পাউডার ব্যবহার করা হয়। এই জন্য আঁশের পাউডার খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চীন ও জাপানে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মাছের আঁশ, ভুড়ি ও কার্প জাতীয় মাছের চামড়া চীন ও জাপানে রপ্তানি হয়ে আসছে।
মাছের আঁশ সংগ্রাহক ইশরাক মিয়া বলেন, আমি প্রতিদিন বাজারে মাছ থেকে আঁশ অপসারণ করি। সাথে সাথে এই আঁশ সংরক্ষণও করি। বিকেল বেলায় বিক্রি করি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তা কিনে নিয়ে ভাল করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বস্তা ভর্তি করে রাখেন। কয়েক মাস পর পর তারা বিক্রি করেন বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে।
ব্যবসায়ী জনিক মিয়া, মুলতাজিম, তৈয়বুল মিয়া বলেন, আমরা কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে মাছের আঁশ ও বোয়াল মাছের ভুড়ি শুকিয়ে বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে আসছি। শুষ্ক মওসুমে আঁশ বা ভুড়ি শুকানো সহজ হয়। ধীরে ধীরে আমাদের এই ব্যবসা বাড়বে।
শহরের প্রধান মাছ বাজারের আঁশ ও বোয়াল মাছের ভুড়ি মজুদকারী পাইকারী বিক্রেতা মো. মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা কয়েক জন ব্যবসায়ী মিলে আঁশ ও বোয়াল মাছের ভুড়ি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছি দীর্ঘদিন আগে থেকে। সংগ্রাহকের সংখ্যাও বাড়ছে দিনে দিনে। ২-৩ মাস পরপর ৪-৫ শত কেজি মাছের আঁশ ও ভুড়ি বিক্রি করতে পারি। এই আঁশ ও ভুড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। এই আঁশ বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর টাকা লাভ করেন। মাছের আঁশ, ভুড়ি ও চামড়া দিয়ে বিদেশে বিলাস বহুল পণ্য তৈরি হয়। ওষুধ তৈরিতে বিভিন্ন কাজে লাগে এবং আঁশের পাউডার খাবার হিসাবে ব্যবহার হয়।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলাউর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জে মাছের আঁশ ও বোয়ালের ভুড়ি বেচাকেনা হয় দীর্ঘ ৫ বছর ধরে। শহরে মাছের ব্যবসার পাশাপাশি এই ব্যবসাও করছেন বেশ কয়েকজনে। যদি এই আঁশ তৃণমূল পর্যায়ে সংগ্রহ করা যেতো, তাহলে ব্যবসা আরও জমজমাট হয়ে উঠতো। এই ব্যবসা খুবই লাভজনক। এই কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা সুনামগঞ্জে এসে মাছের আঁশ ও ভুড়ি কিনে নিয়ে যান। পরে চীন ও জাপানে রপ্তানী করেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com