শহীদনূর আহমেদ ::
মৌসুমের শুরুতেই জমে উঠেছে হাওর পাড়ের মাছের বিভিন্ন আড়ত। বিভিন্ন হাওর ও জলাশয়ে ধরা পড়ছে দেশী প্রজাতির বাহারি জাতের মাছ। এসব মাছ কেজি হিসেবে আড়তে বিক্রি করছেন স্থানীয় জেলেরা। যা আড়ত ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাহিরে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিদিন এসব আড়তে বেচাকিনি কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের দাউদপুর মাছের আড়তের ব্যবসায়ী ও জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মাছ বেচাকিনিতে। ভোররাত থেকে শুরু করে সকাল ১০টা আবার বিকেল তিনটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই শিফ্টে মাছ ক্রয়-বিক্রয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত থাকেন কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ, জেলে ও ব্যবসায়ী।
দূরদূরান্ত থেকে মাছ শিকার শেষে নৌকায় করে আড়তে মাছ নিয়ে আসেন জেলেরা। দেশী প্রজাতির বোয়াল, রুই, কাতলা, আইড়, শোল, গজার, কই, শিং, টেংরা, পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ কেজি ধরে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন জেলেরা। প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয় এই আড়তে। ভরা মৌসুমে এটি কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
দাউদপুরের মতো সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরপাড়ের মাছের আড়তগুলো ভরে উঠছে দেশী মাছে। আড়তদারদের মাধ্যমে এসব মাছ পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বাইরে। মাছের আড়ত ব্যবস্থার সাথে জেলে, ব্যবসায়ী ছাড়াও কয়েক হাজার মানুষের আয়ের সংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। যাঁরা মাছ বাছাইসহ প্রক্রিয়াকরণে শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে থাকেন।
মাছের রাজধানী নামে খ্যাত এ জেলা দেশী মাছের জন্য দেশে বিদেশে সমাদৃত। বোয়াল, রুই, কাতলা, শোল, গজার, আইড়, টেংরা, কই, শিং মাছসহ প্রায় ২০০ প্রজাতির দেশী মাছের অস্তিত্ব রয়েছে জেলার হাওর ও জলাশয়ে। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত এসব মাছের মূল মৌসুম হেমন্ত, শীত, বসন্ত এই তিন ঋতু। এসময় জেলার বিভিন্ন হাওরের জলমহাল, নদী নালা, খাল বিলে প্রচুর পরিমাণ মাছ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। এবার মাছের উৎপাদন ভালো হওয়ায় মৌসুমের শুরুতে শাল্লার দাউদপুরের জেলার হাওরপাড়ের মাছের আড়তগুলোতে মণের মণ মাছ আসতে শুরু করেছে। তাই খুশি আড়তদার ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
দাউদপুর এলাকার আতাউর নামের এক যুবক বলেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মাছের আড়ত এটি। এখানে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। এবার হাওরে দেশী মাছের উৎপাদন ভালো হয়েছে। জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে।
আমির হোসেন নামের আরেকজন বলেন, দাউদপুরের মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। বিদেশেও এর বড় বাজার রয়েছে। আড়তদারদের মাধ্যমে এই মাছ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে মাছের উৎপাদন ভালো হওয়ায় খুশি আমরা। এই এলাকার মানুষ কৃষি ও মাছের উপর নির্ভরশীল। গেল মৌসুমে কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষ এখন হাওরের মাছে দিকে তাকিয়ে আছে।
তবে দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় মাছের ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। ফলে সড়ক পথে মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নিয়ে যেতে অনেক টাকা খরচ করতে হয় ব্যবসায়ীদের। তাই স্থানীয় পর্যায়ের জেলেরা মাছের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। রাস্তাঘাট ভালো হলে দ্রুত সময়ে মাছ পরিবহণ করা যেতো। তিনি আরও বলেন, মাছের দাম উৎপাদন আরও বাড়াতে সরকার সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। অভয়াশ্রম তৈরি করতে হবে যাতে মা মাছ ডিম পারতে পারে।