মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন ::
‘আমার জুবিলী জীবনের প্রথম শিক্ষক মাওলানা আব্দুল খালেক আনোয়ারী স্যার’, ‘আলোর ফেরিওয়ালা আনোয়ারী স্যার’, ‘প্রিয় আনোয়ারী স্যার আর নেই’ এমন অজ¯্র শিরোনামে নিউজ ফিড পূর্ণ আজ সুনামগঞ্জের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের। বিগত ৩০ বছরে ছাত্ররা জুবিলীতে ভর্তি হয়েই যে শিক্ষকের দেখা পেত তিনি জনাব আব্দুল খালেক আনোয়ারি। ৮ নভেম্বর ভোররাতে শিশিরের শব্দের মতো নীরবে চলে গেলেন আলোর ফেরিওয়ালা মাওলানা আব্দুল খালেক আনোয়ারী (৬০), সহকারী শিক্ষক (ইসলামিয়াত), সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ।
১৯৯২ সালে সরকারি স্বরূপচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর থেকে বদলি হয়ে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জে যোগদানের পর দীর্ঘ ২৯ বছর টানা শিক্ষকতার ব্রত পালন শেষে গত বছর জুনে অবসরে যান আনোয়ারী স্যার। প্রায় সারা জীবনই অতিবাহিত করেছেন ৩য় শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে। শিশুদের ¯েœহ-শাসনে নিয়ন্ত্রণ করে সুশৃঙ্খল আগামীর জন্য প্রস্তুত করে দেবার গুরুদায়িত্বটা তিনি সামলে ছিলেন সুদীর্ঘকাল। খুবই দায়িত্ববান ছিলেন। তার অবসরোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বারবার তার দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করছিলেন। প্রবীণ ধর্মীয় শিক্ষক হলেও সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপগ্রেড করে নেবার দুর্বার আকাক্সক্ষা দেখেছি তার মধ্যে। যা জানতেন না তা জিজ্ঞাসার মাধ্যমে জেনে নিতে কখনো কুণ্ঠিত হতেন না। অবসরে যাবার সময় তিনি বেশ ক’জন সহকর্মী রেখে গেছেন, যারা তার সরাসরি ছাত্র ছিলেন। সবার সাথে সহজ সুন্দরভাবে মিশে যাবার একটা অসাধারণ গুণ ছিলো তার। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে দ্বিধা করতেন না। পরিচ্ছন্ন পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতেন।
আনোয়ারি স্যার ১৯৬২ সালের ১লা জুন জগন্নাথপুর উপজেলার ইছগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. আব্দুর রশীদ, মাতা গুলজান বিবি। ১৯৮৩ সালে শিক্ষকতায় প্রথম যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে আত্মীকরণের মাধ্যমে তার চাকুরি জাতীয়করণ হয়।
৮ নভেম্বর ভোর ৪টায় মৃত্যুবরণ করেন। সকাল সাড়ে দশটায় বিদ্যালয় মাঠে প্রথম নামাজে জানাজার পর তার গ্রামের বাড়ি ইছগাঁও এ দ্বিতীয় জানাজা শেষে সমাহিত করা হয়। তিনি স্ত্রী, ৩ কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, ছাত্র, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আমরা মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করি। আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের নসিব করেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জুবিলী পরিরারের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা। আল্লাহ যেন তাদের সবরে জামিল দান করেন। আমিন।
[মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি) : সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ]