1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সুনামগঞ্জের দুরবস্থা দূর করবে কে?

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২

মোহাম্মদ আব্দুল হক ::
বিংশ শতাব্দীর আশি দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক অর্থাৎ দশের দশক, এই সময়ে আমরা যারা সুনামগঞ্জ শহরের মানুষ হিসেবে নিশ্চিত নিরাপত্তার বলয়ে সকল পরিবার মিলে এক পরিবারের পারিবারিক শহর হিসেবে সুনামগঞ্জকে চিনেছি, সেই শান্তিময় শহর এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। যারা ওই সময়ে সুনামগঞ্জ শহরে ঘুরে গেছেন, থেকেছেন সেই সময়ের পর্যটক ও সুধীজন এখনও বলেন, সুনামগঞ্জ হচ্ছে শান্তির শহর।
আমি সুনামগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে ও অলিগলিতে হেঁটে, মাঠে মাঠে খেলে, পুকুরে পুকুরে গোসল করে, শহরের কোলে নিবিড় মায়ায় থাকা ছোটো ছোটো বিলে শাপলা শালুক তুলে ও শহরের শরীর ছুঁয়ে নিরবধি বয়ে চলা সুরমা নদীতে মাঝে মাঝে সাঁতার কেটে, শহরের ষোলঘর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে, সুনামগঞ্জ সরকারি মহাবিদ্যালয়ে পড়ে বড়ো হয়েছি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগার, সুনামগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি আমার বিদ্যালয়। আমার পৈতৃক প্রথম বসতবাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার হরিনাপাটি জন্ম নিয়ে আমার পৈতৃক দ্বিতীয় বসতবাড়ি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘরের বিলপাড়ে আমার বেড়ে উঠা। এভাবেই সুনামগঞ্জ শহরের সকল রাস্তায় আমার চলা। তাই সুনামগঞ্জের প্রশংসা ও সুনাম আমাকে সম্মানিত করে। একইভাবে সুনামগঞ্জের এইসময়ের দুরাবস্থা আমাকে আহত করে।
এখন থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে আমার একটি লেখা তৎকালীন সুনামগঞ্জের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। ওই সময়ের দুরবস্থার কথা তাতে লেখা হয়েছিলো। তখন সুনামগঞ্জ শহরের কোনো কোনো রাস্তা প্রস্থে এখনকার রাস্তার প্রস্থের তুলনায় সামান্য ছোটো ছিলো। এই দীর্ঘ সময় পরে শহরের অল্প কিছু সড়ক যথেষ্ট চওড়া হয়ে সুন্দর রূপে ফুটেছে। তখনকার তুলনায় ত্রিশ বছর পরে শহরের আয়তন কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা, বাসা, বহুতল ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসার ক্ষেত্র, বহু রকম পরিবহন বেড়েছে অনেক বেশি। কিন্তু শহরের অনেক অনেক পুকুর ও খাল ভরাট করে মূল শহরের বিভিন্ন আবাসিক মহল্লার এবং প্রধান বাণিজ্য এলাকার সীমানা বাড়লেও রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা তেমনভাবে গড়ে উঠেনি। এসময়ে যারা সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত নানান প্রয়োজনে চলাচল করেন তারা জানেন কোন কোন রাস্তায় কতোটা অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রধান পয়েন্ট আলফাত উদ্দিন স্কয়ার ( ট্রাফিক পয়েন্ট), মধ্য বাজার, পশ্চিম বাজার, জগন্নাথ বাড়ি রোড, লঞ্চঘাট, কালীবাড়ি রোড, সোমপাড়া, মোক্তারপাড়া, উকিলপাড়া, ষোলঘর মহল্লার ভিতরের সড়ক, বিলপাড় আবু হানিফা সড়ক, নতুন পাড়া, বনানী পাড়া, বলাকা পাড়া, মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু সড়ক, মোহাম্মদপুর পয়েন্ট থেকে সৈয়দ উমেদ হারুন মাজার সড়ক, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে মুক্তিযোদ্ধা হোসেন বখত সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক, সাববাড়ির ঘাট থেকে হাসন রাজার বাড়ির সামনে দিয়ে চলাচলের রাস্তা, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সামনের সড়ক, সুনামগঞ্জ সদর থানা থেকে উত্তর দিকে পুরাতন জেল হয়ে পূর্ব – পশ্চিম দিকে চলাচলের রাস্তা খুবই সংকীর্ণ এবং ওইসব মহল্লার বাসাবাড়ি বৃদ্ধি পেয়েছে, জনসংখ্যা বেড়েছে, মহল্লার বাসাবাড়ির সামনে দোকান গড়ে উঠেছে এমনভাবে দেখলে মনে হয় কেবল বাসা আর বাসা দোকান আর দোকান।
আমি সাধারণ জ্ঞান থেকে খুঁজে পাই শহর এলাকায় ঘরবাড়ি বা দোকান – মার্কেট বানাতে হলে স্থানীয় সরকারের অনুমতি নিয়ে সীমানা থেকে পিছিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে বাসা বা ভবন নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, অধিকাংশ বাসা বা ভবন বা দোকান বা বড়ো মার্কেট একেবারে রাস্তা ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে। দেখার কি কেউ নেই? সুনামগঞ্জ থানার দেয়াল ঘেঁষে বসে সবজির বাজার। তবে সুনামগঞ্জ শহরের হাসন নগরের হোসেন বখত চত্বর (লোকমুখে প্রচলিত বক পয়েন্ট) থেকে পূর্ব-পশ্চিম দিকে চলাচলের রাস্তা তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত সুন্দর রূপে ফুটেছে এবং পুরো শহরের একমাত্র এই সড়কেই দর্শনীয় সুবিধাজনক ফুটপাত লক্ষ করা যায়।
প্রয়াত সাবেক পৌর চেয়ারম্যান দেওয়ান মমিনুল মউজদিন একজন কবি, তিনি তাঁর সময়ে সুনামগঞ্জ শহরের প্রবেশ মুখে ‘হাসন তোরণ’ নির্মাণ করে সুন্দর শহরে মানুষকে স্বাগত জানিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। হাসন তোরণ আমাদের সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রবেশপথের সৌন্দর্য। হাসন তোরণটি এখন মলিন চেহারার রূপ নিয়েছে। উকিলপাড়া পয়েন্ট থেকে উত্তর দিকে সুরমা নদীর তীরে ‘রিভার ভিউ’ পর্যন্ত সুপরিসর সুপরিকল্পিত ফুটপাত গড়ে উঠেছে। সুনামগঞ্জের মানুষের বিনোদনের জন্যে রিভারভিউ নির্মাণ করে প্রয়াত সাবেক মেয়র আয়ূব বখত জগলুল সুনামগঞ্জের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। লক্ষ করলে দেখা যায়, রিভারভিউ এলাকায় বাদামের খোসা, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি আবর্জনা জমে থাকে।
এদিকে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। মনোয়ার বখত নেক সরণি থেকে উত্তর দিকে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে চমৎকার ওয়াক-ওয়ে নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র নাদের বখত। হাসন তোরণ, রিভার ভিউ আমাদের সুন্দর স¤পদ। এসব সৌন্দর্য রক্ষণাবেক্ষণে পৌর কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আশা করছি। কালীবাড়ি এলাকায় পুকুরের পাড় ঘিরে স্বল্প দৈর্ঘ্যরে এক ফুটপাত হয়েছে। কিন্তু, মূল শহরের নিকটবর্তী হিসেবে গুরুত্ব বিবেচনায় কালীবাড়ি সড়কের প্রশস্ত দ্বিগুণ করা জরুরি মনে করি।
সুনামগঞ্জ শহরের আর কোথাও অল্প প্রশস্ত ফুটপাত থাকলেও তাতে নির্বিঘেœ পায়ে চলাচলের উপায় নেই। সর্বত্র সকল ফুটপাত দখল হয়ে থাকে সারাদিন ধরে এবং রাত দশটা পর্যন্ত।
শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা যে খুব ভালো নেই সাধারণ মানুষের চোখেই দেখা যায়। কিছু কিছু ড্রেন নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু; পানি নিষ্কাশনের গতি দেখলে সহজেই বুঝতে পারা যায় অধিকাংশ এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মিত হয়েছে। শহরে মানুষ বেড়েছে এবং অনেকেই রাস্তার পাশে প্র¯্রাব করে। তাই জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্যে পাবলিক টয়লেট বা গণশৌচাগার নির্মাণ করা জরুরি।
সুনামগঞ্জ শহরের অভ্যন্তরে যে সমস্যাটি প্রকট তা হলো আভ্যন্তরীণ পরিবহন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন ও ইউএনও’র সামনে দারুণ দাপটে জেলা শহরে রাতদিন চলে মোটরচালিত রিকশা এবং কয়েকশত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। এসব পরিবহন এলোমেলোভাবে পুরো শহরের সর্বত্র রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং আইনের তোয়াক্কা না-করেই চলতে থাকে। এ অবস্থায় দিনে দিনে সুনামগঞ্জ শহরের অবস্থা অপরিচ্ছন্ন রূপে ধরা দিচ্ছে। জেলা আদালতের প্রধান ফটকের সামনে জটলা লেগে থাকে এবং পুলিশের সামনেই চলে অন্যায় ধূমপান। আমরা সুনামগঞ্জ শহরের এমন অব্যবস্থাপনা থেকে মুক্তি চাই।
২০২২ খ্রিস্টিয় সালের ২৫ অক্টোবর থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহজুড়ে শুধু মাত্র প্রিয় সুনামগঞ্জ শহরকে বিভিন্নভাবে দেখার জন্যে হেঁটেছি, রিকসায় চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি শহরের বিভিন্ন এলাকায়।
যখন পাবলিক প্লেসে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ আইন জারি করা হয়নি; তখনও এতোটা প্রকাশ্যে ধোঁয়া উড়িয়ে তরুণ ও বৃদ্ধদেরকে মুখে বিড়ি বা সিগারেট টানতে দেখিনি আমার প্রিয় সুনামগঞ্জ শহরের বাজার ও পয়েন্টে। এভাবে চলতে থাকলে তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যত আরও মারাত্মক নেশাদ্রব্যে অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে। কারণ, ধূমপান থেকেই নেশায় আসক্তি শুরু হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সাংবাদিক সম্প্রদায় ও সমাজ সচেতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিবেন, আশাকরি।
ছোট্ট প্রান্তীয় জেলা শহরে ঘুরে ঘুরে দেখে মনে হয় যেন, সুনামগঞ্জ শহরের উপরোল্লিখিত সকল দুরবস্থা দেখার কেউ নেই। অথচ আমাদের আছেন মাননীয় পৌর মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, আছেন জেলা প্রশাসক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আইনজীবী সমিতি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সচেতন ছাত্র-শিক্ষক সমাজ, সাংবাদিক সম্প্রদায়, লেখক সম্প্রদায়। তারপরও কেন জনমনে জিজ্ঞাসা – সুনামগঞ্জের দুরবস্থা দূর করবে কে? সত্যি-ই কি তাহলে এক সময়ের শান্তির শহর সুনামগঞ্জের দুরবস্থা দেখার কেউ নেই?
[লেখক – কলামিস্ট ও সাহিত্যিক]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com