এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের একটি প্রশ্নে সম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিতে পারে এমন প্রশ্ন সন্নিবেশিত হয়েছে। গত সোমবার (৭ নভেম্বর ২০২২) বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রতিবেদন করা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশের বিবেকরূপে বিবেচিত বিভিন্ন প্রথিতজন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমাদের সম্পাদকীয় দপ্তরও তার ব্যতিক্রম নয়, বিষয়টি নিয়ে আমরাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং সেই সঙ্গে এর একটি অর্থবহ প্রতিকার হোক আশা করছি।
এমন ঘটনা ঘটার পর একটি কর্তৃপক্ষীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই এবং ইতোমধ্যে বলা হয়েছে যে ভবিষ্যতে আর এমন ঘটনা যাতে না ঘটে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এই ঘটনাটিই কেবল নয়, দেশে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত, যে-গুলো প্রমাণ করছে যে, রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনায় আমরা যথাস্থানে যথোপযুক্ত কর্মী নিয়োগে ব্যর্থ হয়েছি। অতীতে প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে বিভিন্নপদে উৎকোচের বিনিময়ে অপরিণামদর্শী, অমেধাবী, দুর্নীতিগ্রস্ত, সামাজিক শৃঙ্খলাবিরোধী, দেশপ্রেমহীন, অমানবিক ও মতলববাজ মানুষেরা নিয়োগ পেয়েছে এবং তারা বর্তমানে বহাল তবিয়তে আছে। বলা যায় এদেরই অপরিণামদর্শী অসৃজনশীল কর্মপ্রয়াসের বদৌলতে দেশ পরিচালিত হচ্ছে এবং এরা নিজেদের নোংরা মতলবের বশবর্তী হয়ে দেশকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে চলা ছাড়া এগিয়ে নেবার কোনও পথ অবলম্বন করতে পারছে না। বরং দেশের মানুষের পকেটের টাকায় বেতন পেয়ে তারা দেশের মানুষের জন্য কাজ না করে প্রকারান্তরে নিজের কাজে ব্যস্ত আছে। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে একদিকে এই সব মতলববাজ লোকদের চিহ্নিত করে প্রশাসনের দায়ভার থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং যথাস্থানে যথোপযুক্ত মেধাবী, সৃজনশীল ও দেশদরদি মানুষকে নির্বাচন করে নিয়োগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশ হিতের প্রতি বিমুখ মানুষের প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত থাকলে কোনও দিনই জাতি বিশ^সভায় উন্নত জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না, আত্মনির্ভর সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে সক্ষম হবে না, বিশ^ পরিসরে যা যে-কোনও উন্নত জাতির একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। জাতিগত এই ব্যর্থতার দায় থেকে জাতিকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে, অন্যথায় অর্থবিত্তে যতই বড় হওয়া যাকনা কেন আত্মগত উন্নয়নে ছোট থেকে গিয়ে আত্মিক বামনে পরিণত হবে এই জাতি। অর্থবিত্তের প্রাচুর্যের বিষয়টা সামগ্রিক অর্থে হয়ে দাঁড়াবে বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা লটকে দেওয়ার মতো।