স্টাফ রিপোর্টার ::
বহুল প্রতীক্ষার রাণীগঞ্জ সেতু উদ্বোধনের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জজুড়ে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের আবেগ ছুঁয়ে গেছে জেলার আপামর মানুষকেও।
সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলায় এ সেতুটি নির্মাণের ফলে সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে আর সিলেট ঘুরতে হবে না। সুনামগঞ্জ সদর থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলা হয়ে জগন্নাথপুরে এই সেতুর ওপর দিয়ে হবিগঞ্জের আউশকান্দি হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে সরাসরি ঢাকা যাওয়া যাবে। এতে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি ভোগান্তি কমবে। রাণীগঞ্জ সেতু হাওরবাসীর জন্য সুফল বয়ে আনবে। এই সেতু চালু হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফজলে রাব্বী স্মরণ বলেন, রাণীগঞ্জ সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু। এই সেতু নির্মাণ হওয়ায় আমাদের হাওর অঞ্চল আরও এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, নিজে গাড়ি চালিয়ে আজ রাণীগঞ্জ সেতু পার হয়েছি। এই অনুভূতি অনেক আনন্দের। আমরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানসহ এই সেতু নির্মাণকাজে যারা নিয়োজিত ছিলেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ স¤পাদক জুয়েল মিয়া বলেন, রাণীগঞ্জ সেতু চালু হওয়ায় এই রুটে চলাচলে ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমে আসবে। বর্তমানে আমরা যে রুটে ঢাকা যাই সেক্ষেত্রে ৩৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। নতুন রুটে দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ২৮৭ কিলোমিটারে। পথ কমবে ৫৫ কিলোমিটার। দূরত্ব কমায় ভাড়াও সমন্বয় হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, নতুন রুটে সড়কের সংস্কার প্রয়োজন। সব ঠিক থাকলে এবং সড়কে যানজট না থাকলে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা পৌঁছাতে পারবো।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাণীগঞ্জ সেতু এবং আঞ্চলিক মহাসড়কটি চালুর স্বপ্ন দেখে আসছিলাম। নানা প্রতিবন্ধকতায় মহাসড়কে সরাসরি যান চলাচল সম্ভব হচ্ছিল না। তবে এখন আর সুনামগঞ্জবাসীকে সিলেট শহর হয়ে ঢাকায় যেতে হবে না। ৫৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়েই যাতায়াত করা যাবে।
সুনামগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আঞ্চলিক এ মহাসড়কে সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্নের রাণীগঞ্জ সেতুসহ আটটি সেতু উদ্বোধন করা হলো।
সেতুটির উদ্বোধনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সুনামগঞ্জ-৪ (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। তিনি বলেন, এ সেতুর উদ্বোধন অবশ্যই সুনামগঞ্জের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও আনন্দের সংবাদ। রাণীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব যেমন কমল তেমনি জেলার সঙ্গে প্রথম বিকল্প সড়ক যোগাযোগও স্থাপন হলো। এ সেতু নির্মাণে অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ। এ সেতুর সুফল পুরোপুরি ভোগ করতে সংযোগ সড়কে সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে এমপি মিসবাহ আরও বলেন,’বড় আকারের ও ভারী যানবাহন চলাচলের সুবিধার জন্য শান্তিগঞ্জ থেকে জগন্নাথপুর অংশে ২টি বেইলি সেতু আছে। এগুলো সরিয়ে নতুন সেতু নির্মাণ করতে হবে। এছাড়াও, রাণীগঞ্জ থেকে আউশকান্দি সড়কও প্রশস্ত করা প্রয়োজন। আশা করি, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত উদ্যোগ নেবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আজ হাওরবাসীর জন্য আনন্দের দিন। রানীগঞ্জ সেতুসহ মহাসড়কটি চালু আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। এটা বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই সড়ক জেলার যোগাযোগ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।