স্টাফ রিপোর্টার ::
আজ সোমবার (৭ নভেম্বর) সুনামগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের এই দিনে তিনি ঢাকার বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, এক কন্যা, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান ১৯৫৩ সালের ৯ জুন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলহাজ্ব মদব্বীর আলী এবং মাতা মেহেরুন্নেসা খাতুন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যয়নকালীন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশমাতৃকার টানে রণাঙ্গনে চলে যান। ইকোওয়ান প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শহীদ তালেব-এর স্থলাভিষিক্ত করা হয় তাঁকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার-নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার। এমন অবস্থায় হুলিয়া মাথায় নিয়ে দীর্ঘ ১৩ মাস আত্মগোপনে থাকতে হয় মতিউর রহমানকে। পরবর্তীতে স্বাচ্ছন্দ্য জীবনের জন্য সৌদিআরব চলে যান। স্বাধীনচেতা মতিউর রহমান এক মাসের মাথায় দেশে ফিরে আসেন। তারপর কুয়েত গিয়েও সেখানের আবদ্ধ পরিসরে থাকতে পারেননি। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ফিরে আসেন নিজ ভূমে। তখন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। একনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে। পাশাপাশি গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও থাকেন সোচ্চার। যুক্ত হন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। সুনামগঞ্জ জেলা বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ২২ বছর। সুনামগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন ২০ বছর। মঙ্গলকাটা হাইস্কুল, কৃষ্ণনগর হাইস্কুল, রাজগোবিন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা ছিলেন। এছাড়া শিশু-কিশোরদের সংগঠন খেলাঘর আসরেরও উপদেষ্টা ছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে মতিউর রহমান স্থানীয় নানা সামাজিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নানা অনিয়ম-অসংগতির স্পষ্ট বিরোধিতা এবং প্রতিবাদ করতেন তিনি। লেখালেখি ছিল তাঁর নেশা। লেখনির মাধ্যমে অতিসাধারণ বিষয়কে তুলে ধরতেন অসাধারণভাবে নিজস্ব শৈলীতে। তাঁর মোট ১১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।