বিশেষ প্রতিনিধি ::
কুশিয়ারা নদীতে নির্মিত সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড়ো সেতু রাণীগঞ্জ সেতু বাদে আরো ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতুগুলো স্থানীয় যোগাযোগ উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর ও স্থানীয় লোকজন। তাই সেতুগুলো নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন। একসঙ্গে স্বাধীনতার আগে যোগাযোগ উন্নয়নে এমন মাইলফলক সরকারি ভূমিকা দেখেননি সুনামগঞ্জবাসী। তাই স্বাভাবিকভাবেই বড়ো উন্নয়ন পেয়ে উৎসাহ ও উদ্দীপনার আমেজ বিরাজ করছে। এই ১৬ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২২০ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাগলা-জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ-আউশকান্দি মহাসড়কে নির্মিত ৭০২.৩২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু বাদেই তিনটি উপজেলায় আরো ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণীয় সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। এসব সেতু ইতোমধ্যে জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। আনুষ্ঠাকিভাবে আজ সোমবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতুগুলো চালুর ফলে শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল বদলে যাবে। নতুন দিনের সূচনা করবে সেতুগুলো। তাই সেতুগুলো পেয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী উচ্ছ্বসিত।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ছাতক গোবিন্দগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি সেতুর কাজ শেষ করা হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে যান চলাচলও শুরু হয়েছে। এই ৯টি সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের প্রথম কিলোমিটারে ৪০.৯৭৪ মিটারের তকিপুর সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ঘরগাঁও দ্বিতীয় কিলোমিটারে ৫৭.৬৯৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মিত হয়েছে ১০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ৬ষ্ঠ কিলোমিটারে ৪০.৯৭৪ মিটার দৈর্ঘ্যরে হাসনাবাদ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। এই সড়কের নবম কিলোমিটারে মাধবপুর সেতু ৩৪.৮৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ১১ তম কিলোমিটার ৬৭.৭৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে পেপারমিল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। এই সড়কের ১২ তম কিলোমিটারে ৬৪. ৭৯০ মিটার রহমতপুর রহমতবাগ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ১৫ তম কিলোমিটারে টেঙ্গারগাঁও সেতু নির্মাণে ৩৭.৯২০ মিটার সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ২০তম কিলোমিটারে লক্ষীবাউর সেতু ৩৪.৮৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, একই সড়কের ২৪ কিলোমিটারে ৩১.৮৮০ নৈনগাঁও সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। এই সেতুগুলো গত অক্টোবর মাসে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পাগলা-জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ-আউশকান্দি সড়কে শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলায় আরো ৭টি সেতুর কাজ শেষ করা হয়েছে। এগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা। এই সড়কের চতুর্থ কিলোমিটারে ৬৯.৮৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে আক্তাপাড়া সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ৫০.১২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে কোন্দানালা সেতু নির্মাণে ১৩ কোটি টাকা। একই সড়কের ৯৪.২৭৪ দৈর্ঘ্যরে দাড়াখাই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ১৩ তম কিলোমিটারে ৬৩.৭৯৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে কলকলিয়া সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ১৫ তম কিলোমিটারে ৫০.১২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে খাশিলা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা, একই সড়কের ১৮ তম কিলোমিটারে ৬৯.৮৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে নাদামপুর সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। একই সড়কের ২৪ তম কিলোমিটারে ৭৯.০৩০ কাটাখাল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৭ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মহিবুর রহমান মানিক বলেন, ছাতক-দোয়ারার যোগাযোগ উন্নয়নে মাইলফলক স্থাপন করবে ৯টি সেতু। এগুলো বদলে দিয়েছে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার যোগাযোগ চিত্র। তবে আমাদের সুরমা নদীতে নির্মিত দুর্বিন শাহ সেতুটি উদ্বোধন হলে বদলে যাবে জেলার উত্তরাঞ্চল। শীঘ্রই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সেতুটি উদ্বোধন করবেন।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, কুশিয়ারা সেতুর পাশাপাশি একই সঙ্গে আরো ১৬টি নির্মিত সেতু উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই সেতুগুলো আঞ্চলিক যোগাযোগকে বদলে দিবে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এলাকাগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।