1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আজ রাণীগঞ্জ সেতু উদ্বোধন : খুলছে দক্ষিণের স্বপ্ন দুয়ার

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২

শামস শামীম ::
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে হাওরবাসীর বিকল্প যাতায়াতে পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়কে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘ রাণীগঞ্জ সেতু আজ সোমবার (৭ নভেম্বর) উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুশিয়ারা নদীতে নির্মিত জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জে ‘দক্ষিণের দুয়ার’ খ্যাত সেতুটি চালু হওয়ার ফলে ঢাকার সঙ্গে জেলাবাসীর বিকল্প সড়কের দরোজা খুলে যাচ্ছে। ৫৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমার সঙ্গে যাতায়াত খরচও কমবে। দুর্নাম ঘুচবে হাওর-ভাটির বিড়ম্বিত যোগাযোগের। এ উপলক্ষে হাওর জেলায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রশাসনও রাণীগঞ্জে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাণীগঞ্জ সেতুসহ সারাদেশে ১০০ (একশত) সেতু উদ্বোধন করবেন। রাণীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিতব্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হবেন এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান এমপি সরাসরি উপস্থিত থাকবেন।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগ, স্থানীয় সুধীজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৯ সনে এই এলাকার সন্তান, প্রয়াত জাতীয় নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জবাসীর বিকল্প যাতায়াতে পাগলা-আউশকান্দি-রাণীগঞ্জ সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০০১ সনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সুনামগঞ্জবাসীর ঢাকার সঙ্গে বিকল্প ‘পাগলা-জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ-আউশকান্দি সড়ক’ প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করে বাতিল করে দিয়েছিল। প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান জানিয়েছিলেন সুনামগঞ্জবাসী সহজে সিলেট হয়ে যাতায়াত করতে পারে তাই এই বিকল্প সড়কের প্রয়োজন নেই। তখনকার চারদলীয় জোট এমপি জগন্নাথপুরের সন্তান মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরীও এতে বাধা দেননি। এভাবে প্রকল্পটি ভেস্তে যাওয়া হতাশ হন জেলাবাসী। চরম ক্ষুব্ধ হন জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘সবুজ পাতা’ বহুল কাক্সিক্ষত এই প্রকল্পটি নিয়ে আসেন এবং সড়কের কাজ শুরু হয়। তার জোরালো তৎপরতায় ২০১৪ সালের ২৫ জুন একনেক সভায় সেতুর জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প পাস করা হয়। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ-চায়নার যৌথ প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কম্পানি লিমিটেড ২৪ বি এবং বাংলাদেশের এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড যৌথভাবে কাজ শুরু করে। ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। করোনার কারণে ২০২০ পর্যন্ত সেতুর কাজ বিলম্বিত হয়। চিনা প্রতিষ্ঠানটি করোনার কারণে তাদের সেতু বিশেষজ্ঞদের না পাঠানোয় প্রায় এক বছরের অধিক সময় থমকে ছিল কাজ। পরে দ্রুত কাজ শেষ করতে সড়ক বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা-গোমতি নদীতে সেতু নির্মাণে যুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ বাস্তবায়ন শুরু করে। এই সেতুর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেশে একসঙ্গে ‘আই গার্ডার’ ও ‘বক্স গার্ডারের’ সমন্বয় করা হয়েছে। ৬০টি আই গার্ডার, ১২টি স্ল্যাব এবং ১৫ স্প্যানের সমন্বয়ে ৭০২.৩২০ মিটার দৈর্ঘ্য ১০.২৫ মিটার প্রস্থ এই সেতুটি। দুই দিকের দীর্ঘ আড়াই কিলোমিটার অ্যাপ্রোচে রয়েছে তিনটি কালভার্ট। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। সেতুর পাশাপাশি কুশিয়ারা সেতুর দক্ষিণ পাড়ে নির্মিত হয়েছে অ্যাক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন ও আধুনিক ওয়েব বেজ্ড ফোরলেন টোলপ্লাজা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একই সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে আরো ৭টি সেতু ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ৭টি সেতুর সবগুলোতে এখন যান চলাচল হচ্ছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ঢাকা-সুনামগঞ্জ যাত্রী পরিবহন শুরু না হলেও প্রাইভেট পরিবহনে যোগাযোগ শুরু হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ঢাকা থেকে সহজেই কম সময় ও খরচে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। এখন সড়কটি আরো প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জগন্নাথপুরের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ও প্রবীণ মুরব্বি হুমায়ুন মিয়া বলেন, রাণীগঞ্জ সেতু আমাদের সময়ে শেষ হবে কল্পনাও করিনি। এখন আমার চোখের সামনে নতুন স্বপ্ন হয়ে উঁকি দিয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট শহর ঘুরে আমাদেরকে ঢাকা যেতে হতো। কুশিয়ারা নদী পার হতে স্থানীয়দেরও প্রচুর কষ্ট হতো। সেতুটি চালুর ফলে শুধু আমাদের জগন্নাথপুরবাসীই নয় পুরো জেলার মানুষ খুশি।
বাগময়না গ্রামের সালেহ আহমদ বলেন, চারদলীয় জোট সরকার আমাদের সড়ক ও সেতুর প্রকল্পটি বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু আজ আমাদের সড়ক ও সেতুর কাজ শেষ করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আমরা সহজেই কম সময়ে ও কম খরচে ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করতে পারব।
সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, দেশের উত্তরপূর্ব প্রান্তের শেষ জেলা আমাদের সুনামগঞ্জ। আমাদের সিলেট শহর হয়েই ঢাকায় যেতে হয়। এখন পাগলা-আউশকান্দি সড়কে রাণীগঞ্জ সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প যোগাযোগ চালু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা নেত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবেও নতুন দিনের সূচনা করবে সেতুটি। এতে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রাং বলেন, আজ ৭ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০০টি সেতুর মধ্যে আমাদের জেলায় সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড়ো রাণীগঞ্জ সেতুসহ আরো ১৭টি সেতু তিনি উদ্বোধন করবেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা। এ সেতুগুলো নির্মাণের ফলে একটি অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। যাতায়াতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, রাণীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতু ও সড়ক জনগণের জন্য আমরা চালু করে দিতে পেরেছি এটা আমাদের বড়ো পাওয়া। যারা হিংসাপ্রসূত এই বিকল্প সড়ক যোগাযোগ প্রকল্পটি বাতিল করেছিল আজ তাদের চোখের সামনেই শেখ হাসিনা হাওরবাসীর স্বপ্নের দ্বার খুলে দিয়েছেন। আমাদেরকে জাতীয় উন্নয়ন সমতায় পৌঁছে দিতে ভূমিকা রাখবে এই সেতুটি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com