কানার মনে মনে জানার মতো একটি জানা কথা এই যে, প্লাস্টিক বর্জ্য বিশে^র সর্বত্র পরিবেশের ক্রমাগত ব্যাপক ক্ষতি করে চলেছে। আমাদের দেশে এই ক্ষতির পরিমাণ কতোটা ভয়াবহ তার ফিরিস্তি দেওয়া সত্যিকার অর্থেই এক বিরাট মহাযজ্ঞতুল্য বিষয়। এমনকি এর কোনও যথাযথ পরিসংখ্যান হয়েছে বলেও আপাতত অন্তত আমাদের জানা নেই। কেবল এর ভয়ঙ্করত্বের দেদার নমুনার বয়ার্ণনা বিভিন্ন সম্প্রচার মাধ্যমে মাঝে মাঝেই পরিলক্ষিত হয় বটে, তবে তা বন্ধের জন্যে কার্যকর ও ফলপ্রসূ কোনও উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। বন্ধের জন্যে কানাঘোসা যে একেবারে শোনা যায় না এমন নয়, মাঝে মাঝেই শোনা যায় এবং কী করা দরকার তার সস্তা উপদেশ বর্ষণেও কেউ কেউ কম যান না। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণের কথা এখানে প্রসঙ্গক্রমে স্মরণ করা যেতে পারে। সে-নিয়ে অর্থাৎ টাঙ্গুয়াতে প্লাস্টিক বর্জ্য বারণের বিষয়ে উপদেষ্টাদের কম উপদেশ বর্ষিত হয়নি এবং উপদেশ পর্যন্তই তা সীমিত থেকেছে, বন্ধ হয়ে যায়নি বরং দিনে দিনে বাড়ছে। এদিকে প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে দেশের প্রতিটি শহরের পয়ঃপ্রণালী, বলতে গেলে, বন্ধ হয়ে গেছে, তাতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। তাছাড়া প্রতিটি নদীর তলদেশে জমেছে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য, ক্রমে অধিকমাত্রায় নাব্যতা হারাচ্ছে নদীগুলো। ইতোমধ্যে অনেকের উপদেশ বর্ষিত হয়েছে এবং গণমাধ্যমের কল্যাণে বর্ষণের প্রতিযোগ চলছে। কিন্তু, আসলে যা করা দরকার তা কেউই করতে পারছেন না। এমন দুর্বহ অচলাতয়ন ভাঙতে অগ্রসর হয়ে এসেছে একটি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক।
১ নভেম্বর ২০২২ থেকে ‘প্লাস্টিকের প্রচারসামগ্রী ব্যবহার বন্ধ করল ব্র্যাক’, এই শিরোনামে একটি সংবাদ সম্প্রচার করা হয়েছে জাতীয় এক দৈনিকে (প্রথমআলো, ১ নভেম্বর ২০২২)। বলা হয়েছে, ‘পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার সীমিত করণে আরও উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। ধারাবাহিক এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পিভিসি ব্যানারসহ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের সব ধরনের প্রচারসামগ্রী ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এখন থেকে পিভিসি ব্যানারের পরিবর্তে কাপড় বা অন্যান্য পরিবেশবান্ধব উপকরণে তৈরি ব্যানার ব্যবহার করবে তারা।’ পরিবেশবান্ধব এই কার্যক্রম গ্রহণের জন্যে সংস্থাটিকে আমাদের সম্পাদকীয় দপ্তরের পক্ষ থেকে রইল অভিনন্দন।
দেশের দুর্ভোগগ্রস্ত সকল মানুষের পক্ষ থেকে আমরা আশা করছি, দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ প্লাস্টিকসামগ্রী বর্জনে ব্র্যাক-গৃহীত-নীতি অনুসরণ করবেন। তাহলে বোধ করি প্লাস্টিক বর্জ্যরে দ্বারা সৃষ্ট দুর্ভোগ সমগ্র জাতীয় পরিসরে কীছুটা হলেও কমবে।