গত রোববারের (৩০ অক্টোবর ২০২২) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘বখাটেদের হামলায় আহত ছাত্রের মৃত্যু’। ছাত্রটির নাম মিজান মিনার। দোষ অবশ্য তার ছিল! বখাটেরা এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিল, সে প্রতিবাদ করেছে, এই তার ‘অপরাধ’। প্রতিবাদকরণের সাহসিকতার শাস্তি স্বরূপ হামলা করেছে বখাটেরা। এতে সে ভীষণ আহত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
এমন ঘটনা দেশের অনাচে-কানাচে অহরহ ঘটছে। পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, মৌখিকভাবে ঘটনা শ্রবণ করা সুসম্পন্ন হয়েছে এবং লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর নির্গলিতার্থ কি এই যে, পুলিশ স্বতস্ফূর্ত হয়ে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারঙ্গম নয়। বোধ করি তাই। কোনও কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ক্ষতিগ্রস্ত বাদিকে থানা পর্যন্ত পৌঁছতেই দেওয়া হয় না এর আগে তাকে আটকে ফেলা হয়, বিভিন্ন রকমের কৌশল প্রয়োগ করে। সে-সব কৌশলের ফিরিস্তি দিতে চাই না। কেবল বলি, এই রকম কার্যকারণের পরিসরে বিচারপ্রাপ্তি অবশ্যই কীছুটা হলেও বিঘিœত হয় এবং লোকেরা যথাযথ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে দেশে অপরাধীদের রামরাজত্বের পরিসর বৃদ্ধি পায় এবং সমাজে মানবতার শত্রুদের নিয়ন্ত্রণ আরও ব্যাপকতা লাভ করে। এরকম অবস্থার অবসান চাই। এবং এমন অবস্থায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত হলে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা কোনও বিবেচনায়ই মানবিকতার পর্যায়ে পড়ে না।
আইনকে অবশ্যই অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং অপরাধ সংঘটনের প্রতিষেধক হিসেবে তৎপর থাকতে হবে। প্রকৃতপ্রস্তাবে আগে পরের বিবেচনায় কোনও একটিকে উপেক্ষা করা সমীচীন নয়। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর সক্রিয় হওয়ার চেয়ে আগে সক্রিয় হওয়াই আধুনিকতার লক্ষণ। অর্থাৎ অভিযোগগুলো যে-কারণে উঠে সে-কারণগুলো নির্মূল করার প্রচেষ্টার ভেতর দিয়ে যেতে হবে সমাজসংশ্লিষ্ট যে-কোনও প্রতিষ্ঠানকে। বখাটেদেরকে রুখতে তাই সম্ভব্য স্থানে পুলিশি পাহারা কিংবা নজরদারি জোরদার করা উচিত, তাহলে এইরূপ নারী কিংবা ছাত্রী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ হতে পারে, অপরদিকে মিজান মিনারের প্রতিবাদের কাজটি পুলিশি কাজে পর্যবসিত হতে পারে সহজেই এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মিজান মিনারের মতো ভালোমানুষদেরকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হয় না।