স্টাফ রিপোর্টার ::
তাহিরপুরে নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের তৃতীয় তলার ছাদ থেকে রড পড়ে এক ছাত্রী নিহত হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সাত বছর বয়সী নিহত উমাইয়া আক্তার ঊষামণি শ্রীপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে প্রতিদিনের ন্যায় স্কুলে যায় ঊষামণি। এসময় শ্রীপুর (শাহাগঞ্জ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। কোন ধরনের মেশিন ব্যবহার না করে কিংবা শক্ত রশি দিয়ে রড না বেঁধে দু’একজন শ্রমিক মিলে ছাদের উপর ভারি রড তুলছিল। ঊষামণি স্কুলে প্রবেশের সময় শ্রমিকদের হাত ফসকে গিয়ে রড তার মাথায় এসে বিদ্ধ হয়। এতে সে গুরুতর আহত হয়। এ খবর শুনে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা ঊষামণিকে উদ্ধার করে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথেই সে মারা যায়।
তাহিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাহিদুর রহমান, থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মির্জা রিয়াদ হাসান জানান, মাথায় আঘাতের কারণে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম সরোয়ার ডালিম বলেন, শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে লোহার রড ঊষার মাথায় পড়ে। আমি ও তার স্বজনরা দ্রুত তাকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঊষামণি তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল। একমাত্র মেয়ে ঊষামণিকে হারিয়ে তার বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ বলেন, একটি নতুন ভবন তৈরি করতে গেলে সেখানে চারিদিক সুরক্ষিত করতে হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোন রকম বাউন্ডারি না দিয়ে নিয়মনীতি না মেনেই তাদের নির্মাণকাজ করে যাচ্ছিল। যা আইন বহির্ভূত। আমরা এলাকাবাসী এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদার ধর্মপাশা উপজেলার মাইন উদ্দিন বলেন, আমি গত ১৫ দিন আগেই আলাদা একটি ঘর তৈরি দিয়েছি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার জন্য। দুর্ঘটনায় আমার কোনো দোষ নেই। এটি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার জন্য হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের জানান, ছাত্রী নিহতের ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এলজিইডির তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল হাসান বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, এ ঘটনায় নিহত ঊষামণির বাবা বাদি হয়ে ঠিকাদারসহ ৪জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।