স্টাফ রিপোর্টার ::
শাল্লা উপজেলার কান্দিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফিতা রাণী দাসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অশোভন আচরণের অভিযোগ বেশ পুরনো। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা নিলেও তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষকগণ। তারা ফিতা রাণী দাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কান্দিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিতা রাণী দাস যোগদান করেন ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে। ওই সময় থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, নানা অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের সাথে তার অশোভন আচরণ শুরু হয়। এসব বিষয়ে ফিতা রাণী দাসের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের লিখিত অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সত্যতাও পেয়েছেন। কিন্তু এরপরও কোন অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ফিতা রাণীর দাসের শিক্ষক সুলভ পোষাক না পরে বিদ্যালয়ে আসা, শিক্ষার্থীদের বকাঝকা করা, পরীক্ষার্থীর খাতায় আক্রোশমূলক নম্বর দেয়া, শিক্ষার্থী দ্বারা মাথার পাকা চুল বেছে উত্তোলন করা, প্রধান শিক্ষকের আদেশ অমান্য করা, শোকজের সন্তোষজনক জবাব না দেয়া ও আচরণগত পরিবর্তন না হওয়া, সর্বোপরি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আদেশ অবজ্ঞা ও অমান্য করার অভিযোগ আনা হয়। এসব বিষয় উল্লেখপূর্বক বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ও মানোন্নয়নের স্বার্থে ফিতা রাণী দাসকে বদলিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে তাজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেন, তাঁর মেয়েকে অযথাই বকাঝকা করেন এবং বেধড়ক মারপিট করেন শিক্ষক ফিতা রানী দাস। এমনকি কোমলমতি এই শিক্ষার্থীকে প্রাণে মারার হুমকিও দেন তিনি। শিক্ষার্থী অভিভাবক তিনিও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে শাল্লা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার দীন মোহাম্মদের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে শিক্ষক ফিতা রানী দাসের অনিয়ম ও অশোভন আচরণের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ফিতা রানী দাস বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে প্রায়শ: খারাপ আচরণ করেন এবং বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এই কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে এবং শিক্ষকদের মানসম্মান নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়ে লেখাপড়াও বিঘিœত হচ্ছে। এই ফিতা রানী দাস উপজেলার সহদেবপাশা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় সেখানেও তিনি শিক্ষক শিক্ষার্থীর সাথে খারাপ আচরণ করেছেন।
কান্দিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কানন বালা সরকার বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ১৫৬ জন শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক আছেন ৪ জন। এখন ফিতা রাণী দাস অনুপস্থিত থাকায় ৩ জনে পাঠদান করতে হচ্ছে। ফিতা রাণী দাসকে বিদ্যালয় থেকে বদলি করে অন্যত্র না নিলে আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার অবনতি ঘটবে। আমরা এসব বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্তের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
শাল্লা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু রায়হান বলেন, সহকারী শিক্ষক ফিতা রাণী দাসকে শোকজ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা আছে।
শাল্লা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (দায়িত্ব প্রাপ্ত) তাপস কুমার রায় বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তার বেতন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস.এম আব্দুর রহমান বলেন, শাল্লা উপজেলার কান্দিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফিতা রাণী দাস দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন। তিনি নাকি অসুস্থ এ কথা জানিয়েছেন। এই জন্য তাঁকে মেডিকেল বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড যদি বলে তিনি অসুস্থ, তখন এক রকমের ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি বলে তিনি অসুস্থ নন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে অন্যরকম ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।