গত শনিবার (২৯ অক্টোবর ২০২২) দৈনিক সুনামকণ্ঠের শীর্ষ শিরোনাম ছিল, ‘টাঙ্গুয়ার প্রাণ-প্রকৃতি পুনরুদ্ধার কাজ শুরু’। সুনামগঞ্জের তথা সারা ভাটিবাংলার জন্যে, অথবা বলা ভালো, তাৎপর্যের দিক থেকে বাংলাদেশের জন্যে এটি আশা-ভরসার অবলম্বনরূপ একটি মহৎ উদ্যোগ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এটি টাঙ্গুয়ার জন্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বারোদ্ঘাটন করে প্রকৃতপ্রস্তাবে দেশের মিঠাপানির মৎস্যসহ সামগ্রিক জৈবপ্রকৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাণ-প্রকৃতিকে নতুন সম্ভাবনায় উজ্জীবিত করবে। ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার পরিসরে কষ্টকর জীবন যাপনে বাধ্য দেশের মানুষের পক্ষ থেকে আমরা এই সম্পাদকীয় দপ্তর এমনটিই আশা পোষণ করছি।
শিরোনামের ‘পুনরুদ্ধার’ শব্দটির নির্গলিতার্থ যেমন মনের ভেতরে আশার বীজ বপন করে তেমনি অতীতে আমাদের সীমাহীন ব্যর্থতার খতিয়ানকে স্মরণ করিয়ে দেয়, তদুপরি কোনও কোনও সাবধানী ও হিসেবী মানুষের চেতনায় আবার ব্যর্থতার আশঙ্কাকে উসকে দিয়ে মনকে শঙ্কাকুল করে তোলে। সে-ব্যর্থতার খতিয়ানকে প্রতিবেদনে, ‘২০০৩Ñ২০১৮ সন পর্যন্ত দাতাসংস্থা আইইউসিএন ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষার বদলে আরও সঙ্কটাপন্ন হয়েছে’ বলে বিবৃত করা হয়েছে। এই সঙ্কটাপন্নাবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্যে ব্যর্থতার জন্যে দায়ী প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তব্যকর্ম সমাপনের বা ‘ব্যবস্থাপনার’ ভার পুনরায় ন্যাস্ত করা সমীচীন নয় বলে এই অভিজ্ঞমহলের ধারণা, যদিনা ইতোমধ্যে ব্যবস্থাপকদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট কার্যটি সুষ্ঠুরূপে সমাপন করার সত্যিকার উপযুক্ততা কিংবা দক্ষতা অর্জিত হয়ে থাকে। অন্যথায় আবার ব্যর্থতার কুৎসিত মুখ দেখবেন টাঙ্গুয়ার প্রতিবেশ কিংবা ‘প্রাণ-প্রকৃতি’ পুনরুদ্ধারের অধীর অপেক্ষায় থাকা সুনামগঞ্জ, এমনকি সারা দেশের মানুষেরা। বলাবাহুল্য সেটা আরও খারাপ ও অপূরণীয় ক্ষতি হবে এবং সেটার জন্য দায়ী থাকবেন ‘টাঙ্গুয়ার প্রাণ-প্রকৃতি পুনরুদ্ধার কাজ’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টজনেরা। ইতিহাস তাঁদের কোনও দিনই ক্ষমা করবে না, তাঁদেরকে বিশ্ব প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকরূপে চিহ্নিত করে রাখবে, তাঁদের প্রশাসনিক শ্রেষ্ঠত্বের পাশে এই ব্যর্থতার কলঙ্ক কীছুতেই মুছে যাবে না এবং প্রকারান্তরে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বকে ম্লান করে দেবে।