1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গৌরারং ইউনিয়নকে বিভক্তের দাবি

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার ::
জেলার বৃহৎ ইউনিয়ন সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়ন। দেশ স্বাধীনের পর অন্যান্য বৃহৎ ইউনিয়নগুলো উন্নয়নের স্বার্থে বিভক্ত হলেও এই ইউনিয়ন দুইভাগে বিভক্ত হয়নি। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে, ভোটারও বেড়েছে। বেড়েছে গ্রামের বসতির সংখ্যা। রাস্তা-ঘাটের যথাযথ উন্নয়ন না থাকায় বেড়েছে ভোগান্তি। তাই ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ও মানুষজনের ভোগান্তি কমিয়ে আনতে এবং সেবা, সুবিধা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন দুইভাগে বিভক্তের দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, গৌরারং ইউনিয়নে ৫২টি গ্রাম রয়েছে। প্রায় ৩২ হাজার ভোটার রয়েছেন ইউনিয়নে। এই জেলার বৃহৎ ইউনিয়নগুলো বিভক্ত করা হলেও এই ইউনিয়ন এখনও অবিভক্ত রয়েছে। এই কারণে ইউনিয়নের নাগরিক সেবা, সুবিধা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নেই। প্রতিটি গ্রামের ও মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের স্বার্থে গৌরারং ইউনিয়নকে দুই ভাগে বিভক্ত করার দাবি সচেতন ইউনিয়নবাসীর।
ইউনিয়নের একাধিক নাগরিক জানান, দেশ স্বাধীনের পর থেকে উন্নয়নের স্বার্থে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বিভক্ত করা হয়েছে। কিন্তু গৌরারং ইউনিয়ন বিভক্ত করার দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো লাভ হয়নি। অতীতের কোনো চেয়ারম্যান ইউনিয়ন বিভক্তের উদ্যোগ নেননি। ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি গত দুই বছর আগে ইউনিয়ন বিভক্তের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছেন। ওই সময় প্রশাসন থেকে বিভক্তের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে রেজুলেশন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যানের কোনো উদ্যোগ ছিল না, তাই রেজুলেশন আকারে প্রস্তাব পাঠানো হয়নি প্রশাসনে। বিভক্ত না হওয়ায় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় যথাযথ উন্নয়ন হচ্ছে না। বাড়ছে সেবা গ্রহিতাদের নানা ভোগান্তি।
গৌরারং ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কার্লভাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে না। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনও নির্মাণ হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর থেকে জেলার এই ইউনিয়ন উন্নয়নে অবহেলিত রয়েছে। বর্তমান লোক সংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে বরাদ্দের পরিমাণ খুব কম।
এই ইউনিয়নের এক প্রান্তে রয়েছে সোনাপুর গ্রাম। এই গ্রামটি সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। অপর প্রান্তে রয়েছে নিয়ামতপুর গ্রাম। সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের এই গ্রামটিও বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। বিশাল এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে কেউ সেবা নিতে চাইলে একদিকে যেমন যাতায়াত খরচ লাগছে বেশি, অপরদিকে সময়ও লাগছে বেশি। বয়স্ক পুরুষ বা মহিলাদের নাগরিক সেবা গ্রহণের পরিবর্তে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একজন নাগরিক পরিষদে চেয়ারম্যানের কাছে তাঁর বিশেষ কাজে যেমন, চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নেয়া, ভাতা কার্ডের জন্য যোগাযোগ করা, রিলিফ পেতে যোগাযোগ করা, জন্ম নিবন্ধন করতে যোগাযোগ করা অথবা অন্যান্য কোনো বিশেষ কাজের জন্য যোগাযোগ করতে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
রাঙ্গামাটি গ্রামের আর্শ্বাদ আলী বলেন, বিভক্ত না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে আসা-যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে আমাদের। তাছাড়া ইউনিয়নে সুষম উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সময় সেবা নিতে আমাদের যেতে হয় ইউনিয়ন পরিষদে। কমপ্লেক্স না থাকায় আমাদের বসার জায়গা পাওয়া যায় না। রাস্তা-ঘাটের তো উন্নয়ন নেই। আমাদের জীবনমানেরও উন্নয়ন নেই। তাই ইউনিয়ন দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার দাবি আমাদের।
নলুয়াপাড়ের বাসিন্দা আছমা আক্তার বলেন, ইউনিয়নের এক সীমানা থেকে অন্য সীমানায় হেঁটে যেতে সারাদিন লাগে। ইউনিয়ন বিভক্ত হলে আমরা সেবা পাবো বেশি এবং কষ্ট হবে কম। এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হবে।
গৌরারং ইউনিয়নের বেড়াজালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. শাহানুর আলম বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে গৌরারং ইউনিয়নে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের যথাযথ উন্নয়ন নেই। এমনকি ইউনিয়ন কমপ্লেক্সও নির্মাণ হয়নি। মানুষ সেবা নিতে আসলে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে আসতে হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি হয় মারাত্মক। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নসহ সেবা গ্রহিতাদের ভোগান্তি কমিয়ে আনতে ইউনিয়ন দুই ভাগে বিভক্ত করার দাবি আমাদের।
গৌরারং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় থেকে এই ইউনিয়নকে দুই ভাগে ভাগ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায় দুই বছর আগেও জেলা প্রশাসক বরাবরে ইউনিয়ন ভাগের জন্য আবেদন দিয়েছি। সাবেক চেয়ারম্যানের কাছে রেজুলেশন আকারে প্রস্তাব চেয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু তিনি দেননি।
নিয়ামতপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আয়না মিয়া বলেন, গৌরারং ইউনিয়নকে দুই ভাগে বিভক্ত করার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। এই কারণে ইউনিয়ন এলাকায় রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থা। ইউনিয়নের নাগরিকদের জীবনমানের উন্নয়নের স্বার্থে গৌরারং ইউনিয়নকে দুই ভাগে ভাগ করা জরুরি দরকার।
রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদ মিয়া বলেন, জেলার বৃহৎ ইউনিয়ন গৌরারং। এই ইউনিয়ন দুই ভাগে বিভক্ত না হওয়ায় যথাযথ উন্নয়ন হচ্ছে না। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন নেই। সুষম উন্নয়নের স্বার্থে ইউনিয়ন বিভক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে।
বর্তমান ইউপি সদস্য মমিন মিয়া বলেন, আমরা অতীতেও অনেক চেষ্টা করেছি ইউনিয়নকে দুই ভাগে বিভক্ত করতে। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটির প্রতি আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তাই এই বিশাল ইউনিয়ন নিয়ে আছি এখনও।
গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী বলেন, গৌরারং ইউনিয়ন বিশাল থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। ইউনিয়ন নাগরিকদের জীবনমানের উন্নয়ন নেই, রাস্তা-ঘাটেরও উন্নয়ন নেই। আমি মনে করি সার্বিক উন্নয়ন বিবেচনা করে ইউনিয়ন দুইভাগে বিভক্ত করা খুবই প্রয়োজন। এই জন্য আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে রেজুলেশন আকারে প্রস্তাব পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। তিনি বলেন, জেলার সকল ইউনিয়নে কমপ্লেক্স নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই ইউনিয়নের কমপ্লেক্স নির্মাণ হয়নি। আমার দায়িত্ব পালনের সময়কালে অবশ্যই কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com