গত বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর ২০২২) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি উদ্ধৃত সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতি হাজার গর্ভবতীর ১১৩ জন কিশোরী’ এবং সংবাদবিবরণীর একস্থানে বলা হয়েছে, ‘প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন গর্ভবতীর বয়স ১৫ বছরের নিচে’। অথচ দেশের আইন বলছে, ১৮ বছরের কম বয়সী নারীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নারীর সম্মতি অথবা অসম্মতির ভিত্তিতেÑ অর্থাৎ যে-কোনওভাবেই হোকÑ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিদ্যমান আইনের নির্গলিতার্থ একটাই, বিবাহ সম্পর্কের ভেতরে কিংবা বিবাহ সম্পর্কের বাইরে এইরূপ সম্পর্ক (অর্থাৎ ১৮ বছরের কম বয়সী নারীর সঙ্গে পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক) স্থাপন পুরুষের পক্ষে প্রকৃতপ্রস্তাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইনি মর্মার্থের সাপেক্ষে দেশে হাজারে ১১৩ জন পুরুষ ধর্ষণের অপরাধ করে আইনের পক্ষে থেকে এক ধরনের অলিখিত বা অঘোষিত দায়মুক্তি অর্জন করে অপরাধের নির্ধারিত দ- থেকে রেহাই পাওয়া অবস্থায় আছে বলে ধরে নেওয়া যায় এবং নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায় যে, আইন আছে অইনের জায়গায় কিন্তু কার্যকর করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না, প্রকারান্তরে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য কার্যত মাঠে মারা যাচ্ছে। এইভাবে আইনের মাঠে মারা যাওয়ারও একটি নির্গলিতার্থ আছে এবং প্রথম বিচেনায় সে-টি এই যে, দেশে ধর্ষণ একটি স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্ক হিসেবে স্বীকৃত প্রপঞ্চ বা সমাজবাস্তবতা, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই দিক থেকে বিবেচনায় আইন কেন করা হলো, সেটা বোধগম্য নয়। এমন অকার্যকর আইন কেন আইনের খাতায় বিদ্যমান তাও বোধগম্য নয়। অপরদিকে এর আর একটি নির্গলিতার্থ আছে। সে-টি এই যে, চূড়ান্ত পর্যায়ে সার্বিক বিবেচনায় জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহুবিধভাবে। প্রথমত অপ্রাপ্তবয়স্কা নারী সন্তান জন্মদানের জন্যে অপরিপক্ক শরীরে গর্ভধারণ করে নিজের শরীরের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধিবহির্ভূত আচরণে ব্যাপৃত হচ্ছেন এবং বিপরীতে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানসম্মত সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারছেন না এবং পরিণতিতে দেশ অসুস্থ নাগরিক লাভ করছে, যাঁরা উন্নত বিশ্বের উচ্চ-প্রাযুক্তিক পরিসরে নিজেকে কোনওভাবেই যোগ্য বলে প্রতিপন্ন করতে পারবেন না, প্রকারান্তরে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার দৌড়ে দেশ অনিবার্যভাবেই পিছিয়ে পড়বে।
আমরা মনে করি, এই ক্ষতি থেকে বাঁচতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের পরিপূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যেনো কেউ বাল্যবিবাহ করতে না পারে। যাঁরা বাল্যবিবাহ সংঘটনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে সংশ্লিষ্ট থাকবেন তাঁদেরকেও আইনের আওতায় এনে দ-দানের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে। তাছাড়া, যাতে লোকেরা আইন অমান্য না করেন, সে-টা নিশ্চিত করার জন্য, হাজারে ১১৩ জন পুরুষকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করে দ- প্রয়োগ নিশ্চিত করা অবশ্যই দরকার, কারণ তাঁরা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী।