শাল্লা উপজেলায় গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এবং সে-অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে। স্থানীয় একটি পত্রিকায় এই মর্মে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, গত ২৬ অক্টোবর। এমন নিয়োগ বাণিজ্যের কোনও কমতি নেই বাংলাদেশে। প্রতিনিয়ত এসব দুর্নীতি হচ্ছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।
নিয়োগ বাণিজ্য এতোটাই গভীরভাবে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিস্তৃত হয়েছে যে, সে-টার বিস্তৃত বয়ার্ণনা প্রদান করতে হলে একটি মহাভারতের মতো বহরে ব্যাপ্ত বিরাট মহাকাব্য লেখা হয়ে যেতে পারে, এবং বলা বাহুল্য, সে-টা এই সম্পাদকীয়র কর্ম নয়। কেবল একটি উদাহরণ দিচ্ছি, অদূর অতীতে আমাদের জেলার সরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি নিয়োগকর্মে দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছিল। এই নিয়োগকর্মের একটি শর্ত ছিল, প্রার্থীকে অবশ্যই সুনামগঞ্জ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অথচ নিয়োগ পেয়েছেন সুনামগঞ্জের বাইরের জেলার লোকেরা। এখানে বাইরের লোকেদের অনুকূলে জেলার স্থায়ী বাসিন্দার পরিচয়পত্র প্রস্তুত করে চাকরি দেওয়া হয়। এটি নিয়োগ বাণিজ্যের বহুবিধ প্রকরণের একটি নমুনা মাত্র। এখানে এমন নমুনাভেদে নিয়োগ বাণিজ্যের বয়ার্ণনা প্রদান করার অবকাশ নেই। কিন্তু এই নমুনাটি অবশ্যই দেশের সর্বত্র নিয়োগ বাণিজ্যের ভয়াবহ বিস্তারের বিষয়টিকে প্রকটিত করছে এবং প্রতিপন্ন করছে যে, প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই নিয়োগ বাণিজ্যের জঘন্য রক্তবীজ নিহিত আছে। যেমন- গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি ও প্রশাসনের কোনও উচ্চপদের কর্মকর্তা এই রক্তবীজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এই রক্তবীজকে নির্মূল করতে না পরলে, যতই কেন নিয়োগ স্থগিত করা হোক, তাতে কোনও ফলোদয় হবে না। প্রশাসনের নিয়মনীতি-আইনের ফাঁকফোঁকর আগে বন্ধ করতে হবে, যেগুলোর নাজুকতা-দুর্বলতাকে ব্যবহারকরে দুর্নীতি করা হচ্ছে এবং দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনও বেগ পেতে হচ্ছে না। অর্থাৎ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে, হম্বিতম্বি যতোই করা হোক, কোনও কাজ হবে না।
বিদগ্ধ মহলের অভিমত এই যে, এমন অনিয়ম ও দুর্নীতিকে চলতে দেওয়া যায় না। এতে দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ বাণিজ্যের দুর্নীতির হাত ধরে এইসব নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি জীবনের পুরোটাই দুর্নীতিতে দুর্নীতিগ্রস্ত অবস্থায় অতিবাহিত হয় এবং প্রকারান্তরে জনগণ দীর্ঘস্থায়ী দুনীতির শিকারে পর্যবসিত হন, দেশ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকে। আমার মনে করি, সরকারের পক্ষ থেকে এইরূপ দুর্নীতিকে বন্ধ করার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।