1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

জেলায় এক বছরে ২১১০ বিবাহ বিচ্ছেদ : প্রতি মাসে ভাঙছে ১৭৫ সংসার

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

শহীদনূর আহমেদ ::
পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে। বছর দুয়েক সংসার করার পর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পারিবারিক কলহ আর স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসতে হয় গৃহবধূ জায়েদাকে। এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলে আপোষ মিমাংসায় আবারও স্বামী একই উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের জামলাবাজ গ্রামের দেলোয়ারের সাথে ঘর বাঁধেন গৃহবধূ। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও পারিবারিক কলহ ও নির্যাতনের শিকার হতে হয় জায়েদাকে। স্বামীর নির্যাতনে বাধ্য হয়ে ঢাকায় পারি জমান এই গৃহবধূ। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জায়েদার বাবার বাড়ির ঠিকানায় স্বামীর কাছ থেকে চিঠি আসে। নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে জায়েদাকে তালাক দিয়েছেন স্বামী। ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবার বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নে। তিনি পাথারিয়া গ্রামের আলী আহমদের মেয়ে। তালাকনামা পাওয়ার পর থেকে আকাশ ভেঙে পড়ে জায়েদার মাথায়। তালাক ঠেকাতে আইনী লড়াই করবেন নাকি, সন্তানের ভরনপোষণ ও মোহরানার দাবিতে পারিবারিক আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করবেন এমন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর। জায়েদার মতো এমন অনেক গৃহবধূর ঘর ভাঙছে প্রতিদিন। কোনটা উভয়পক্ষের ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়।
জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে হাওর জেলা সুনামগঞ্জে। প্রতিমাসে গড়ে ১৭৫ দম্পতির বিচ্ছেদ হচ্ছে। ২০২১ সালে এক বছরে জেলায় ২১১০টি বিবাহ বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেশি। বিবাহ বিচ্ছেদের হারের দিকে প্রথম দিকে রয়েছে ছাতক উপজেলা। গেল এক বছরে ছাতক উপজেলায় ৪৪১টি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার স্থান। এক বছরে এই উপজেলায় ভেঙেছে ৩৫৪ দম্পতির সংসার। সবচেয়ে কম বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে শাল্লা উপজেলায়। এক বছরে মাত্র ১৭টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও ২০২১ সালে জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৩৪টি, দিরাই উপজেলায় ১৮২টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ১৮১টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৩১টি, তাহিরপুর উপজেলায় ১৫১টি, ধর্মপাশায় ৮৬টি, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় ৯৭টি, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ২৩৬টি বিবাহ বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমানে নারীরা তাদের অধিকার ও অবস্থান বিষয়ে সচেতন অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা বিচ্ছেদের দিকে ধাবিত করে। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল দেখা দিলেও দেখা যায় অনেকেই না মানিয়ে বা সমঝোতায় না এসে বিচ্ছেদকে বেছে নেয়। এছাড়া পরকীয়া আসক্তি বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আধিপত্যবাদী মনোভাব। একটি যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া এবং বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের ফলশ্রুতিতে দেখা যায় পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয় এবং বিচ্ছেদ হয়। এছাড়াও পরিবারকে সময় না দেওয়া, কর্মজীবী নারীরা পরিবারে বেশি সময় কাটাতে পারেন না যাকে অনেকেই বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে দেখেন। দাম্পত্য জীবনের ছোট ছোট ভুল মেনে নেওয়ার প্রবণতা না থাকা, স্ত্রীকে যথাযথ ভরণপোষণ না দেওয়া। যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করা, মাদকাসক্তি, পুরুষত্বহীনতা এবং বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
হাওর অঞ্চল সুনামগঞ্জের বিবাহ বিচ্ছেদের এমন হারকে উদ্বেগজনক বলে মনে করেন এই আইনবিদরা। সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, অনেক পরিবারের অভিভাবকরা অসচেতন থাকেন। অল্প বয়সেই ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়ে থাকেন। পরিবার ও সংসার সম্পর্কে বোধগম্যতা না হওয়ার আগেই বিয়ে হওয়ায় নানা কারণে দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য কলহ বাঁধে যা বিবাহ বিচ্ছেদে রূপ নেয়। অল্প বয়সে প্রেমে পড়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বা কোর্টে হলনামা করে সংসার জীবনে আবদ্ধ হওয়া পরিবার বিচ্ছেদের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। যৌতুক, নারী নির্যাতন, পারিবারিক বিরোধও বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। তিনি আরও বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদের হার কমিয়ে আনতে সচেতন হওয়া জরুরি। ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আইনের অনুশাসন ও ধর্মীয় রীতিনীতির উপর গুরুত্ব দেয়ার কথাও জানান তিনি।
জেলা রেজিস্ট্রার মফিজুল ইসলাম বলেন, মুসলিম আইন অনুযায়ী, বিবাহ একটি নাগরিক ও পারিবারিক চুক্তি এবং এই চুক্তির মাধ্যমে দম্পতি একটি সুন্দর পরিবার একসঙ্গে থাকার শপথগ্রহণ করে। বিবাহ এমন একটি পবিত্র বন্ধন যা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের ওপর স্থায়ী হয়। খুব সুনির্দিষ্ট কারণে তালাক অনুমোদিত, কিন্তু এটি নিরুৎসাহিত। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন এবং ১৯৭৪ সালের বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধন আইন অনুসারে, জরুরি প্রয়োজনে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে। কিন্তু এখন আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিবাহ বিচ্ছেদ কখনোই কাম্য হতে পারে না। দুঃখজনকভাবে এটা এখন আমাদের দেশে শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে হরহামেশাই ঘটছে। বিবাহ বিচ্ছেদ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে শুধুমাত্র একটি কারণ বিচ্ছেদের জন্য দায়ী হতে পারে না। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা না থাকা এবং পারিবারিক কলহের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদের দ্বারস্থ হতে হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com