শংকর দত্ত ::
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ছত্রছায়ায় প্রশিক্ষণ এবং সশস্ত্র কর্মকা-ের তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে র্যাব-৭ ও র্যাব-১৫ অভিযান চালায়। সেই অভিযানে ১০জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। সেই ১০জন জঙ্গির মধ্যে একজন গ্রেফতার হওয়া যুবক মো. রুপু মিয়া (২৫) ছাতক উপজেলার বাসিন্দা। সে উপজেলার ছৈলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের রাড়ীগাঁও গ্রামের আব্দুস সালামের তৃতীয় পুত্র। সে এমসি কলেজে অধ্যয়নরত বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, রুপু মিয়া লেখাপড়ার পাশাপাশি চা-পাতা ও মোবাইলের কাভার ইত্যাদি পণ্য গোবিন্দগঞ্জ, বাংলাবাজার, ছৈলা বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে কেনা বেচা করতো। এলাকায় সে ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত। তার জঙ্গি হওয়া মানতে পারছেন না স্বজনরা।
স্বজনরা জানান, রুপুর সাথে এলাকার লোকজনের যোগাযোগ কম ছিল। ঢাকা- সিলেট বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপাতা-মোবাইল সামগ্রী ক্রয় করতে যেতো। পরিবারের ধারণা, ঢাকা-সিলেট সেখান থেকেই কোনোভাবে সে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে।
রুপু মিয়ার পিতা আব্দুস সালাম একজন কৃষক। তার বড়ভাই রাজা মিয়া ওমানে থাকেন। মেজো ভাই নাছির মিয়া সিলেটের দর্জির কাজ করেন। রুপুদের টিনের ব্যাটনের ঘর। জরাজীর্ণ অবস্থা। এলাকায় তারা ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। গ্রাম্য কোন জটিলতায় নেই তারা।
রুপু মিয়ার পিতা আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় ১৫-১৬দিন যাবৎ সে বাড়িতে যোগাযোগ করে না। ছেলে বড় হয়েছে তাই ভাবতাম কয়দিন বাহিরে থাকবে আসবেনে। তবে তার মা বলতো খোঁজ নিতে, তখন ফোন করলে বন্ধ পেতাম। এদিকে গত শুক্রবারে ভেবেছি শনিবারে ছাতক থানায় জিডি করবো। এর মধ্যেই বড় ভাই আব্দুল মনাফ মারা যান। বিকেলে আত্মীয়-স্বজনেরা ফোনে জানায় ছেলে বান্দরবানে জঙ্গিদের হয়ে কাজ করতে যেয়ে ধরা পরে। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পকেড়।
স্থানীয় বাসিন্দা নানু মিয়া বলেন, কাজে কামে ব্যস্ত থাকতাম। রুপুর সাথে কথা হতো তবে বেশ একটা নয়। আমার আব্বা মারা যান গত শনিবার (২১অক্টোবর) আব্বার জানাজায় চেয়ারম্যান সহ সবাই ছিলেন। কিন্তু রুপু মিয়া ছিল না। বিকালে শুনেছি সে জঙ্গি সদস্য হওয়ায় র্যাব গ্রেফতার করেছে। সে এমনভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়বে আমাদের কল্পনায়ও ছিল না।
গ্রেফতার হওয়া রুপু মিয়ার ব্যাপারে ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গয়াস আহমদ বলেন, রুপু মিয়ার পিতা আব্দুস সালাম এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। কারোর কোন অভিযোগ নেই। সেই ব্যক্তির সন্তান এমন কাজ করবে কল্পনা করতে পারছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, তাঁর স¤পর্কে আরো গভীরভাবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দেশে জঙ্গিদের কোন ছাড় নাই, স্থান নাই।