নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্টে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করা হয়। কিন্তু গত ৪ বছরেও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বিধিমালা প্রণীত হয়নি। আইনের কিছু কিছু ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কের সার্বিক অবস্থার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো সড়কে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি, নৈরাজ্য, হয়রানিসহ নানা অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। সড়কে অব্যবস্থাপনার করুণ পরিণতির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জননিরাপত্তার স্বার্থে এই নৈরাজ্য চলতে দেয়া যায় না।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদানের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ আইনের প্রত্যাশা অনেক পুরনো। কিন্তু কোনো সরকার এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে বলে মনে হয় না।
২০১৮ সালে রাজধানীতে এক বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদের চাপে পুরনো আইন সংশোধন করে অপরাধের দ-ের মাত্রা বাড়ানোসহ কিছু কঠোরতা আরোপ করা হয়। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, গাড়ির লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ভুয়া লাইসেন্সের জন্য শাস্তি আরো বেশি। সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদ- ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন ধারায় ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য বাড়ানো হয়েছে শাস্তি ও জরিমানা।
আমরা মনে করি, পরিবহন খাত এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় এখন পরিবহনে যুক্ত। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। এ জন্য পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।