স্টাফ রিপোর্টার ::
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সোমবার ভোর থেকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
বৃষ্টির কারণে সড়কে মানুষের ভিড় অন্যদিনের তুলনায় কম লক্ষ্য করা গেছে। যানবাহন কম হওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া দুর্ভোগে পড়েন খেটে খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষেরাও। সোমবার শহরের এলাকা ঘুরে মানুষের দুর্ভোগচিত্র দেখা গেছে।
আলফাত স্কয়ারের ফুটপাতের ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ বলেন, বৃষ্টির কারণে ছোট করে দোকান বসিয়েছি। রাস্তায় মানুষ কম বের হচ্ছে। বেচাকেনা নেই। তেমন আয় রোজগার হচ্ছে না।
তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাকিব বলেন, ফুটপাতের যে বেহাল দশা ঠিক মতো হাঁটাও যায় না। রাস্তার কাদা-পানি লেগে বিশ্রী অবস্থা হয়েছে।
মোটর সাইকেল চালক আমিনুল মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে সারাদিনই বসে থাকতে হয়েছে। যাত্রী নেই, আয়-রোজগার বন্ধ।
দিনমজুর জাহিদ মিয়া বলেন, সকালে বৃষ্টির পরিমাণ একবারেই কম ছিল বের হয়ে বাজারে আসলাম। এরপর বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ে। এ জন্য সারাদিন বসে থাকতে হয়েছে। আজ কোনো কাজ পাইনি।
এদিকে টানাবৃষ্টিতে আমন ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। জগন্নাথপুরের বাসিন্দা কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, আমাদের জমির আমন ধান পরিপক্ব হয়ে গেছে। আর এক সপ্তাহের মধ্যেই কাটা যাবে কিন্তু এমন সময় বৃষ্টি এসেছে তাতে ধান নিয়ে আমরা চিন্তায় পড়ে গেছি। সময় মতো যদি ধান কাটতে না পারি তাহলে অনেক ক্ষতি হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তাই ওইসব এলাকায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি আশঙ্কা রয়েছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা বুধবার (২৬ অক্টোবর) পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই সময়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া এর প্রভাবে এই সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, গোমতী ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মনু, খোয়াই, সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সময় বিশেষে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় সব জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৫ থেকে ০৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এই প্রভাব বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমূহে অধিক হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে বাংলাদেশের বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুদ্দোহা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সুনামগঞ্জের সুরমা-কুশিয়ারাসহ কয়েকটি নদীর পানির বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ভয়াবহতার উপর নির্ভর করবে সবকিছু।