শংকর দত্ত ::
ছাতকে রোপাআমন ও শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুমে তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে। ইউরিয়া, নন ইউরিয়া সারের জন্য কৃষকরা প্রতিদিন সারের ডিলার কাছে গিয়েও পাচ্ছেন না। অনেক স্থানে সার পাওয়া গেলেও মূল্য অধিক থাকায় সার কিনতে পারছেন না কৃষকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চাহিদার বিপরীতে সারের তেমন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। সার ডিলার আশরাফুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, সারের জন্য টাকা জমা দিয়েও সার পাওয়া যাচ্ছে না। শাহজালাল ফার্টিলাইজার কো¤পানি চাহিদা অনুযায়ী সার ডেলিভারি দিচ্ছে না। সার ডিলার উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ ট্রেডিং কর্পোরেশন সারের চাহিদা দিয়ে কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর একটি আবেদন করেছেন। তিনি সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দ পেয়েছেন ২০ মেট্রিক টন সার। বর্তমানে তার গুদামে কোন সার মজুদ নেই। আগস্টের বরাদ্দ ছিল ৩৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া,২০ মেট্রিক টন এম ও পি এবং ১৫ মেট্রিক টন টিএসপি সার। বরাদ্দের এ সার বাড়তি গাড়ি ভাড়া, ট্রাক ধর্মঘট এসব কারণে নির্ধারিত সময়ে আনা যায় নি। বিভিন্ন উপজেলায় আগস্টের বরাদ্দের ৬২০ মেট্রিক টন সার ডেলিভারি দিতে পারেনি শাহজালাল ফার্টিলাইজার কো¤পানি। সার সংকটের বিষয়ে কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, সার সংকটের কারণে আমরা কৃষকরা দুশ্চিন্তায় আছি। যদি সময়মতো কীটনাশক, সারের ব্যবহার করতে না পারি তবে উৎপদন ব্যাহত হবে। ধার দেনা করে এনে জমি চাষা করা আমার মতো কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গেলো দু’ছর বন্যা আর খরায় ফসলের মুখ দেখিনি। এবার যদি পর্যাপ্ত সার সংকটে ফসল নষ্ট হয় তবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তিনি আরো জানান, কোন কোন দোকানে সার পাওয়া যায় তবে অতিরিক্ত মূল্য।
উপ-পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি বরাবরে সার বরাদ্দের জন্য কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান গত ২৭ সেপ্টেম্বর একটি পত্র দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাতকে কৃষির ব্যাপক সম্ভাবনা বিরাজমান। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ধান সহ রবিশষ্য উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে এখানে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪৫ হেক্টর বেশি। শীতকালীন শাক-সবজি চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫ শ হেক্টর জমিতে। বোরো ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই তুলনামূলকভাবে এখানে সারের বরাদ্দ কম রয়েছে। আগস্টে ৯৭ মেট্রিক টন সার শাহজালাল ফার্টিলাইজার কো¤পানি লিমিটেড হতে সরবরাহ না দেয়ায় বর্তমানে ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি অতিরিক্ত ১৫০ মেট্রিক টন ইউরিয়া ও ৩৮০ মেট্রিক টন নন ইউরিয়া সারের জন্য আবেদন করেছেন।
অপরদিকে আগস্ট মাসের বরাদ্দের ৫৯২ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মধ্যে ৪৯৫ মেট্রিক টন সার উত্তোলিত হয়েছে। বাকি ৯৭ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার গোবিন্দগঞ্জ ট্রেডিং, চাষী ট্রেডার্স ও ছামি এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদানের সুপারিশ করে একই দিনে পত্র দিয়েছেন শাহজালাল ফার্টিলাইজার কো¤পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান সার সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অক্টোবর মাসের বরাদ্দ হয়েছে মাত্র। আশা রাখছি সমস্যার সমাধান দ্রুত হয়ে যাবে।