সারাদেশেই আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয়ে গেছে (১ অক্টোবর ২০২২)। হয়েছে সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা। সুনামগঞ্জও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানেও শহরের প্রখ্যাত সুধীজনেরা প্রশাসনিক আয়োজনের ছায়ায় নিজেদের মহামূল্যবান ও পা-িত্যপূর্ণ বক্তব্য-মতামত ব্যক্ত করেছেন। ফলাও করে গণমাধ্যমে সংবাদ সম্প্রচার করা হয়েছে, ‘বর্ণাঢ্য র্যালি’র ছবি ছাপা হয়েছে এবং সভায় প্রদত্ত বক্তব্যের ধারণা ধরে বক্তাদের নামের দীর্ঘ তালিকা দেওয়া হয়েছে। সংবাদ-সম্প্রচারের বিষয়বস্তু এই পর্যন্তই। জানা গেলোনা দেশের প্রবীণদের অবস্থা এখন কেমন আছে, তাঁরা কীভাবে জীবন নির্বাহ করছেন, যাঁরা সরকারি চাকুরে ছিলেন না এমন প্রবীণদের অবসরভাতার সরকারি সুবিধা (যদিও তা যৎকিঞ্চিৎ, তবু তো দেওয়া হচ্ছে, আরম্ভ তো করা গেছে গোছের।) কারা পাচ্ছেন, তাঁদের সংখ্যা কতো এবং সমগ্র দেশের গঞ্জ-গ্রামান্তরে যাঁরা পাচ্ছেন না তাঁদের সংখ্যা কতো?
আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন রাজনীতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, তাঁরা মুখ চিনে মুগের ডালে সদাসর্বদা বিশ্বাসী। এজন্য এ প্রকার সুবিধাদি দলীয় আনুগত্যানুসারে বণ্টিত হয় বলে কোনও বিশেষ দলের আনুগত্য যাঁরা পোষণ করেন না সেই সব সাধারণের ভাগ্যে কোনওরূপ সুবিধাদির ছিকে ছিঁড়ে না এবং প্রবীণদেরকে অবসরভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সাধারণত প্রযোজ্য হয় বলে কোনও কোনও মহলের ধারণা। পরিসংখ্যান নিলে অবশ্যই দেখা যাবে যে, প্রকৃতপ্রস্তাবে দেশে এই সব সুবিধাবঞ্চিত প্রবীণ মানুষদের সংখ্যাই বেশি।
সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি ইতোমধ্যে একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে, তাছাড়া তাঁদের ‘উপরি আয়’-এর সকল-ক্ষেত্রে-প্রমাণ-পাওয়া-যায়-না এমন ব্যবস্থাও বহাল আছে, সে-টা নির্মূল করা যাচ্ছে না। কিন্তু সাধারণ মানুষের সুবিধাদি বাড়ানো হয়নি এবং বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বারবার বেড়ে গিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে তাঁদের জীবনকে অতীতের তুলনায় দুর্বিষহ করে তোলেছে এবং সেটা মানুষের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত। বৈষম্যটি অবশ্যই আর্থনীতিক। পাকিস্তানিরা এই বৈষম্য তৈরি করেছিল পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এবং এখন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সে বৈষম্যই তৈরি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। দেশের প্রবীণরা এই অবিমৃষ্যকর আর্থনীতিক বৈষম্যময় সমাজ বাস্ততার পরিসরে অত্যন্ত কষ্টকর জীবনযাপন করছেন।
এই পরিস্থিতিতে কেবল এটাই আশা করা যায় যে, বর্তমান উন্নয়নশীল আর্থনীতিক বাস্তবতায় দেশকে কল্যাণরাষ্ট্রের আর্থনীতিক আদলে পরিচালিত করে প্রবীণদের বিদ্যমান অবসরভাতার প্রচলনকে পরিমিতির দিক থেকে পরিপূর্ণ করা। অবশ্যই পরিপূর্ণ করা এই অর্থে যে, অবসরভাতার পরিমাণটি তাঁদের জীবননির্বাহের জন্যে যথেষ্ট হওয়ার মতো বাড়িয়ে দেওয়া।