1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গান চুরি নিয়ে বিতর্ক, এ আর নতুন কি?

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

:: ওবায়দুল মুন্সী ::
গান চুরি! এ আর নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে এরকম ঘটনা অহরহ দেখা যায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ খ্রি. তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার আনন্দ কণ্ঠ পাতায়-‘বিতর্কে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ঘোষিত তিন গান’ শিরোনামে, এন আই বুলবুল সাহেবের এই লেখাটি নজরে পড়লো। লেখাটি পাঠ করে খুবই মর্মাহত হলাম। গান চুরি নিয়ে একেরপর এক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। আর এসব ঘটনা যাঁরা ঘটাচ্ছেন তাঁরা অনেকেই বিখ্যাতজন। প্রান্তিক গীতিকার ও সুরকারদের অনেক গানই রাজধানীর নামিদামি সুরকার ও শিল্পীরা শব্দ বদল করে নিজের নামে ও সুরে গেয়ে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। এঁরা যে জাত শিল্পী নয়; গান নিয়ে প্রতারণা থেকেই বুঝা যায়। একটি গান লিখতে এবং সুর করতে কত কষ্ট তা আমি নিজেও টুকটাক লিখি বলে বুঝতে পারি। এই তো ক’দিন আগে, বাংলা ভিশন চ্যানেলে প্রান্ত নামে এক শিল্পী ‘আমি সুনাগঞ্জের লোক, আমি হাছন রাজার লোক’ গানটি গেয়েছিল। গানে, আমার এই দুটি লাইন ও সুর হুবহু মিল রেখে বাকি অংশ পরিবর্তন করে নিয়েছে। আমার বন্ধু-বান্ধবদের যাঁরা শুনেছে সবাই প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি বলে সবাই এখনো আমার উপরে ক্ষেপে রয়েছে।
শেখ এম এ ওয়ারিশ নামে আমার এক আংকেল আছেন যিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার ও সুরকার। আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি বলে, আক্ষেপ করে বলেছেন যে, ‘হয়তো মুন্সী গানটি বিক্রি করে দিয়েছে’। নইলে সে প্রতিবাদ করছে না কেন? আসলে, আমার মতো দরিদ্রের পক্ষে এর প্রতিবাদ করে কী লাভ! যেখানে অনেক বিত্তশালী লেখকদের গানও পাল্টিয়ে অন্য গীতিকার তাঁর গান বলে চালিয়ে দেন। আর, আজকে দেখলাম বাংলাদেশের জনপ্রিয় গীতিকার কবির বকুল আবারও কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘হঠাৎ দেখা’র দুটি লাইন- ‘রাতের সব তারাই আছে, দিনের আলোর গভীরে’ দিয়ে ‘বিশ্ব সুন্দরীর’ তুই কি আমার হবিরে, গানটি লিখেছেন। শুধু তাই নয়! কবিগুরুর দুই লাইনের লেখা ‘আলো’ শব্দটিও বাদ দিয়েছেন। রীতিমত এ যেন ডাকাতি। তা না হলে এত দুঃসাহস তিনি কেমনে দেখান। আর এই গানের জন্য, সুরকার ও শিল্পীরাও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন। এখানেই কবির বকুল নামে গীতিকারের গান নিয়ে কারচুপির শেষ নয়! এরপূর্বেও তিনি, আমার শ্বশুর পল্লী বাউল জবান আলীর লিখা ‘প্রেমের মানুষ ঘুমাইলে চাইয়া থাকে’ গানটির অনেক শব্দ পরিবর্তন করে নিজের নামে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মামলায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা হলে, রাতারাতি সুনামগঞ্জ এসে সহজ সরল প্রবীণ গীতিকারকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে মামলা থেকে নিজেকে জামিন করিয়ে নিয়েছিলেন। যা নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সারির পত্রিকা- দৈনিক সমকাল (১ ডিসেম্বর ২০১৬), কালের কণ্ঠ (৩ ডিসেম্বর ২০১৬) ইত্যাদি জাতীয়, স্থানীয় অনেক পত্রিকার নিউজ হয়েছে। অতীতে সিলেটি অনেক গান নিয়েও অনেক মাতামাতি হয়েছিল। যেমন- ‘স্বাদের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’ ‘ভ্রমর কইও গিয়া’ এরকম আরও অনেক গান নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। ভুলক্রমে, একদিন একটি চ্যানেলে গণসংগীত শিল্পী সদ্য প্রয়াত ফকির আলমগীর সাহেব – ‘স্বাদের লাউ গানটি’ চিটাগাং-এর বলে চালিয়ে নিয়েছিলেন কিন্তু আমার ওস্তাদ সিলেট লোকগানের প্রবাদ পুরুষ সুরকার শ্রী বিদিত লাল দাস (প্রয়াত) এটা দেখে, আমাকে নিয়ে সাথে সাথেই ঢাকা গিয়ে, ফকির আলমগীর সাহেবকে বলে এসেছিলেন যে, এটা আমাদের সিলেটিদের গান, আমি নিজে এর সুরকার। যেখানে উপস্থিত ছিলেন- কামাল লোহানী, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, সুবীর নন্দি, বারি সিদ্দিকী, আকরামুল ইসলামসহ অনেকেই। অবশ্য, ফকির আলমগীর সাহেব তাঁর ভুল স্বীকার করেন এবং সুন্দর সমাধান করে নেন।
এবার দেখা যাক, গান চুরি নিয়ে, ‘কপিরাইট আইন’ কী বলে। এন আই বুলবুলের লেখায় এবং কবির বকুলের গান নিয়ে কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেছেন – ‘যদি কেউ রবীন্দ্রনাথের দুটি লাইন গানে ব্যবহার করে থাকেন তা হলে, অবশ্যই সেটির স্বীকৃতি দিতে হবে, অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের নাম উল্লেখ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেছেন- ‘বড় অপরাধ হলো, ওই যে তিনি একটা শব্দ বাদ দিয়েছেন ‘দিনের আলোর গভীরে’ থেকে ‘আলো’ শব্দটি আর নিজের গান বলে চালিয়ে নিয়েছেন,এজন্যে তিনি প্রতারণামূলক অপরাধের সম্মুখীন হবেন। যদি তাই হয়, এখন থেকে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের উক্ত বিষয় নিয়ে জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত। এই যে গান নিয়ে এত রটনা-ঘটনা হচ্ছে এর একটা বিহিত করতে এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের সুদৃষ্টির প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থে, গানসংক্রান্ত বিষয়ে যদি শক্তিশালী ইতিবাচক একটা উদ্যোগ নেওয়া যায়, এতে আমারমতো অনেক প্রান্তিক দরিদ্র গীতিকারেরা তাঁদের পরিশ্রমের লেখা গানের স্বত্ব নিয়ে আর চিন্তিত থাকবে না।
লেখক: কবি, গীতিকার, সাধারণ সম্পাদক, সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদ (সুসাস) গণপাঠাগার, সুনামগঞ্জ।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com