অঞ্জন পুরকায়স্থ ::
হাওরবেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জের অবহেলিত জনপদ জামালগঞ্জ উপজেলা। ৩৩৮.৭৪ বর্গ কি.মি. আয়তনের এ উপজেলার ৬ ইউনিয়নের মধ্যে জনসংখ্যায় ও আয়তনে সর্ববৃহৎ ফেনারবাঁক ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, ধর্মপাশা উপজেলার টার্নিং পয়েন্টে অবস্থিত আমানীপুর গ্রাম। প্রবহমান সুরমা নদীর কড়াল গ্রাসে বিলীন হচ্ছে এই গ্রামের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি। এছাড়া হুমকির পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, শ্রীশ্রী হরি মন্দির, খেলার মাঠ, শাহী ঈদগাহসহ ৮০টি বাড়ীঘর।
বিগত ৫ বছর পূর্বে একই গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে বর্মণপাড়ার ৩০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘর-বাড়ি ভাঙনের ফলে পার্শ্ববর্তী সরকারি জায়গায় কর্মসংস্থান কর্মসূচির অর্থ দিয়ে গুচ্ছ গ্রাম নাম দিয়ে ভিট তৈরি করেছে ইউনিয়ন পরিষদ। যেখানে এখনো নেই নলকূপ ও পৌঁছেনি পল্লী বিদ্যুৎ, পায়নি বিধবা ও বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য সরকারি সেবা। কিন্তু এ হতদরিদ্র পরিবারগুলো এখনো আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এসে গৃহায়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে জানান, বর্মণ পরিবারের জয়মোহন বর্মণ।
ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রঞ্জন তালুকদার, আমানীপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন, বাজারের সেক্রেটারি আবারক আলী ও মঙ্গল আলী বলেন, ভাঙনের কবলে যাদের ভিটে মাটি বিলীন হয়েছে, তাদেরকে সরকারিভাবে খাস জায়গায় বসবাসের ব্যবস্থা না করলে যাযাবরের মত জীবন কাটাতে গিয়ে শহরমুখী হবে গ্রামের দরিদ্র মানুষ। বর্তমান নদী ভাঙনের কবলে অসহায়দের মধ্যে আমানীপুর বাজার কমিটির সভাপতি আ. আলীম বলেন, ১৯৯০ সালে এমপি রফিকুল ইসলাম সোহেল মাধ্যমে সরকারি প্রথম অনুদান দিয়ে বাজারের কাজ শুরু হয়। তখন নদী থেকে বাজার ও গ্রাম ছিল বহু দূর। বাজারের ৯০টি দোকান ঘরসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে নদীতে। বর্তমানে স্কুল, ক্লিনিক, মন্দির, ঈদগাহ হুমকির মুখে পড়েছে। অতিদ্রুত নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে হবে।
ফেনারবাঁক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার বলেন, আমানীপুর আমার নির্বাচনী এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রাম। নদী ভাঙ্গনের ফলে গ্রামবাসীর অধিকাংশ মানুষ বসতভিটা হারিয়ে এখন অসহায়। বিলীন হয়েছে বাজার, দোকানঘর, রাস্তাঘাট। বিলীনের অপেক্ষায় আছে স্কুলের নতুন ভবন, মন্দির ও ক্লিনিক। এগুলো রক্ষায় পাউবো ছাড়া কোনো সুব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দুর্ভোগ লাঘবে যথা সম্ভব চেষ্টা করবো।
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় আমানীপুর গ্রাম নদী ভাঙ্গনের কবলের করুণ দৃশ্য দেখেছি। খুব খারাপ লেগেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্ব সহকারে নদী শাসনে আমানীপুরকে রক্ষার অনুরোধ করব। যে সকল পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে তাদেরকে সেই সব এলাকার পাশাপাশি সরকারি খাস জমিতে বসবাসের জন্য বন্দোবস্ত করার চেষ্টা করব।