সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিকভাবে কঠোর হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র বলছে, টানা তৃতীয় দফায় দলটি ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূলের অনেক নেতাই সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মানছেন না। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা না মেনে অনেকেই ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বা তাদের মদদ দিয়েছেন। কেউ কেউ পদ-পদবি ধরে রাখতে পকেট কমিটি দিয়ে সম্মেলনের সময় ক্ষেপণ করছেন। তাই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অচিরেই মাঠে নামছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদকরা।
সূত্র বলছে, অনেক জেলা-উপজেলায় দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলা-উপজেলার নেতাদের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতিতে সবাই ব্যহমশ হয়ে পড়েছেন। তাই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা তৃণমূল পর্যায়ে তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন শেষ করে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে কোনো ধরনের পকেট কমিটি করা যাবে না। সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের প্রাধান্য দিতে হবে। যদি কেউ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যান, তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন। এই বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর সঙ্গে জড়িত কারও ভাগ্যে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারও জুটতে পারে। কেউ কেউ আর কোনো দিন দলীয় কোনো পদ-পদবি পাবেন না। আর যাদের অপরাধের মাত্রা কম তাদের শোকজ করা হবে। এরপরও যদি কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো বলয় তৈরি করেন, তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও বিদ্রোহী ঠেকাতে কখনও কেন্দ্রের নির্দেশে আবার কখনও তৃণমূলের সিদ্ধান্তে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের জন্য কয়েক হাজার সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তবে কেন্দ্র থেকে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ইতোমধ্যে দলীয় বিভিন্ন ফোরামে বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার ও অব্যাহতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায়ও বিষয়টি উঠে আসে। এরই মধ্যে তৃণমূল থেকে যে বহিষ্কারের সুপারিশ এসেছে এবং যাদের শোকজ করা হয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখে, দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কারসহ অপরাধভেদে শাস্তির বিধান করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো সংসদ সদস্য জড়িত থাকলেও আগামী সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ছাড়া দলীয়ভাবে পদচ্যুত করে প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত করে রাখা যেতে পারে। একই সঙ্গে তৃণমূলের যেসব এলাকায় সম্মেলন হয়নি, তার দিন-তারিখ ঠিক করতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, দলের তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। কারণ আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে যত দ্রুত সম্ভব এ কাজগুলো করা হবে। তৃণমূলের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ ছাড়া যারা নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন, তাদের অলরেডি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যারা নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, তাদের তালিকা তৈরি করার। এখন পর্যন্ত পার্টির সিদ্ধান্ত তাদের দল থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কার করা। যারা মদদ দিয়েছেন, তাদের ভবিষ্যতে মনোনয়ন দেওয়ার সময় এটি দেখা হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাউকে কাউকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তাদের পদাবনতি করে প্রাথমিক সদস্যপদ রাখা। এটা হলে তাদের নিজেদের যেমন উপলব্ধি হবে, দলের ঐক্যও রাখা সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন- জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নকে ঢেলে সাজানোর। তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করার নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। যেখানে সম্মেলন বাকি আছে সেগুলো স¤পন্ন করব।
তিনি বলেন, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করে বিএনপি-জামায়াত যে অপরাজনীতি সৃষ্টি করেছে, দেশবাসীকে একত্রিত করে এর জবাব দেবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। আমাদের নেতাকর্মীর কোনো অভাব নেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ আমাদের আগামী নির্বাচনে উইন করতে হবে। সেক্ষেত্রে জনগণ আমাদের মূল শক্তি। তাই জনগণ যা চাইবে সেভাবেই আমাদের দল কাজ করবে। আর এটি করতে পারলেই আমরা সাকসেস হব।
তিনি বলেন, প্রতিটা বিভাগের আলাদা দায়িত্বে সাংগঠনিক স¤পাদকরা রয়েছেন। তারা তাদের কাজগুলো দ্রুতই করে ফেলবেন। কারণ করোনার কারণে আমরা অনেক কিছুই করতে পারিনি। ইতোমধ্যে আমার দায়িত্বে থাকা সিলেট বিভাগের অনেক কাজ এগিয়ে নিয়ে এসেছি। আগামী ১২ মার্চ সুনামগঞ্জ, ১৩ মার্চ মৌলভীবাজার ও ১৪ মার্চ হবিগঞ্জে দলের বর্ধিত সভা হবে। আর যে দুয়েকটা বাকি থাকবে তা রমজানের আগেই করে ফেলব।